সামরিক শক্তিতে বিশ্বে কতটা এগিয়ে ইসরাইল?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:০৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত ও সামরিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত বাহিনী। দেশটির অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের সবচেয়ে বড় উৎস বন্ধু রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের বিমান হামলায় প্রতিদিন শয়ে শয়ে ফিলিস্তিনির মৃত্যু হচ্ছে। বাদ পড়ছেন না নারী ও শিশুরাও।
সামরিকভাবে ইসরাইল কতটা শক্তিশালী আসুন জেনে নিই সেই সম্পর্কে—
ইসরাইলের সামরিক শক্তি ও সরঞ্জামের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) মিলিটারি ব্যালেন্স ২০২৩ অনুযায়ী, ইসরাইলের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীতে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
এ ছাড়া দেশটির চার লাখ ৬৫ হাজার সদস্যের রিজার্ভ বাহিনী রয়েছে। এর মধ্যে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য আট হাজার।
ইসরাইলে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সব নাগরিকদের জন্য সামরিক পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক। সাধারণত সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর পুরুষরা দুই বছর আট মাস এবং নারীরা দুই বছর কাজ করবেন বলে আশা করা হয়। উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি এবং আধুনিক অস্ত্রসমৃদ্ধ বিশাল ভাণ্ডার থাকায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
সামরিক বাহিনীর সদস্য
* এক লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সদস্য
* চার লাখ ৬৫ হাজার সদস্যের রিজার্ভ বাহিনী
স্থল অভিযানের সক্ষমতা
* দুই হাজার ২০০ ট্যাংক
* ৫৩০ আর্টিলারি বা কামান
বিমান হামলার সক্ষমতা
* যুদ্ধের উপযোগী ৩৩৯ উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ৩০৯টি গ্রাউন্ড অ্যাটাক যুদ্ধবিমান (১৯৬ এফ-১৬, ৮৩ এফ-১৫, ৩০ এফ-৩৫)।
* ১৪২ হেলিকপ্টার, ৪৩ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।
নৌ অভিযানের সক্ষমতা
* পাঁচটি সাবমেরিন এবং ৪৯টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধযান
আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
ইসরাইলের আয়রন ডোম সিস্টেম হলো একটি ভ্রাম্যমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যা রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্পপরিসরের রকেট ঠেকাতে ও ধ্বংস করতে সক্ষম। ২০০৬ সালে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের পর ইসরাইলে এটি তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ যুদ্ধে ইসরাইলের দিকে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আয়রন ডোম ২০১১ সালে থেকে ব্যবহার শুরু হয়। ২০২২ সালে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্য দেড় বিলিয়নের ডলারের বেশি বরাদ্দসহ আয়রন ডোম সিস্টেমের যন্ত্রাংশও সরবরাহ করে দেশটি।
আরও পড়ুন: ইসরাইলে অকারণে হামলা করেনি হামাস: জাতিসংঘ মহাসচিব
আইআইএসএসের তথ্যমতে, ইসরাইলের আয়রন ডোম সিস্টেম ২০২১ সালে হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের ছোড়া ৯০ শতাংশেরও বেশি রকেট আটকে দিয়েছে।
আইআইএসএসের মতে, ইসরাইলের পারমাণবিক ক্ষমতাও রয়েছে বলে মনে করা হয়। দেশটির কাছে জেরিকো ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম বিমান রয়েছে।
সামরিক খাতে ইসরাইল কত খরচ করে?
যুদ্ধ ও অস্ত্রের নিয়ে গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে ইসরাইল সামরিক খাতে ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। ২০১৮-২২ মেয়াদে সামরিক খাতে দেশটির মাথাপিছু ব্যয় দুই হাজার ৫৩৫ মার্কিন ডলার, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাথাপিছু সামরিক ব্যয়। এ মেয়াদে বিশ্বে মাথাপিছু সামরিক ব্যয়ের শীর্ষে কাতার।
২০২২ সালে ইসরাইল জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করেছে, যা বিশ্বে দশম।
ইসরাইল থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে যেসব দেশ
ঐতিহাসিকভাবে ইসরাইলের অস্ত্র আমদানি তাদের রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি। তবে এসআইপিআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, গত দশকে দেশটির অস্ত্র রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে আমদানিকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে।
২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত ২৫ দেশ ইসরাইল থেকে মোট ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে। এর মধ্যে ইসরাইল থেকে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে ভারতে, যা দেশটির অস্ত্র রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরাইল ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বিকশিত হয়েছে। ওই বছর ইসরাইলি অস্ত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা ছিল আজারবাইজান (২৯৫ মিলিয়ন ডলার), তার পরে ফিলিপাইন (২৭৫ মিলিয়ন ডলার), যুক্তরাষ্ট্র (২১৭ মিলিয়ন ডলার) ও ভিয়েতনাম (১৮০ মিলিয়ন ডলার)।
২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইসরাইল শুধু দুটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে মোট ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসরাইল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানি করেছে, যা দেশটির সামরিক আমদানির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি। বাকি ৫৪৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র জার্মানি থেকে আমদানি করেছে দেশটি।
এ ছাড়া মার্কিন ও ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যৌথ মহড়া, প্রযুক্তি উন্নয়ন কর্মসূচি ও প্রতিরক্ষা প্রকল্পে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। মার্কিন সামরিক সহায়তার সর্বোচ্চ অংশ পায় ইসরাইল।
ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে?
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া ইসরাইল ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের পর্যন্ত প্রায় ২৬৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহায্য পাওয়া মিসরের চেয়ে ১ দশমিক ৭ গুণ বেশি। মিসর গত ৭৭ বছরে ১৫১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ২০২৩ সালেও মার্কিন সামরিক তহবিল পাওয়ায় শীর্ষে ইসরাইল, ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে দেশটি।
১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরাইলকে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহায়তা হিসেবে মোট ১২৪ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর ইসরাইলকে দেওয়া ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার মধ্যে অর্ধ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য। ওয়াশিংটন বলেছে, হামাসের বিরুদ্ধে সর্বশেষ যুদ্ধে ব্যবহৃত ইসরাইলি অস্ত্রের ঘাটতি তারা পূরণ করে দেবে।