চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে পাকিস্তানকে কি এগিয়ে নিতে পারবেন নওয়াজ?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:০৫ পিএম
নওয়াজ শরিফ। ছবি: জিও নিউজ
অনেকটা বিজয়ীর বেশে পাকিস্তানে ফিরেছেন মিয়া নওয়াজ শরিফ। আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের অগ্রগতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত জানাশোনার ভিত্তিতে বলতে পারি তিনি একজন সংস্কারপন্থি।
তিনি পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ, জ্বালানি খাত, বিচার বিভাগ, ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ (এফবিআর) এবং সিভিল সার্ভিসসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার করতে চান। আমার জানামতে, তিনি অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চান।
মিয়া নওয়াজ শরিফ ত্রিমুখী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি: তার দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ, এলিটদের লুণ্ঠন (এলিট ক্যাপচার) ইস্যু এবং একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক দৃশ্যপট।
প্রথমত, তার নিকটতম উপদেষ্টা এবং সহযোগীরা সংস্কারের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি শেয়ার করেন না। দ্বিতীয়ত, অভিজাতদের অশুভ ভূত দেখা যাচ্ছে, যেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একটি নির্বাচিত গোষ্ঠী, রাজনীতিবিদ এবং ধনী অভিজাত শ্রেণিকে ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সম্পদের ওপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ‘এলিট ক্যাপচার’ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্রোনিজমের (ঘনিষ্ঠদের মধ্যে সুবিধাভোগী শ্রেণি) জন্ম দেয়। এই সমস্যাটি পাকিস্তানে একটি শক্তিশালী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ সমাজের দিকে দেশের অগ্রগতিতে বাধাগ্রস্ত করে।
মিয়া নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানি সমাজের মধ্যে গভীরভাবে বিভাজিত তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণের মুখোমুখি। শাসন, জবাবদিহিতা ও অর্থনৈতিক নীতির মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো এই গভীর বিভাজনের জন্য অনুঘটক। এই মেরুকরণ গঠনমূলক রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে, যার ফলে জরুরি সমস্যাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয় এবং অর্থনৈতিক অসুবিধা ও নিরাপত্তার আশঙ্কা তো রয়েছেই।
এসব পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সফল হওয়ার জন্য মিয়া সাহেবকে (নওয়াজ শরিফ) নিম্নলিখিত পাঁচটি পদক্ষেপের এজেন্ডা গ্রহণ করতে হবে—
প্রথমত, পিএমএল-এনকে শক্তিশালী করতে এবং দলের অভ্যন্তরীণ সংহতি নিশ্চিত করতে হবে। দলের মধ্যে তরুণ নেতাদের উৎসাহ দিতে হবে।
এর পর মিডিয়া ও সামাজিক প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ নওয়াজ শরিফকে জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে, তার দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে এবং বিরোধীদের অপপ্রচার মোকাবিলা করতে হলে আধুনিক যোগাযোগের সরঞ্জামগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তার পর মিয়া নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শাসনের জন্য একটি স্পষ্ট এবং বাধ্যতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে হবে। তাকে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং দুর্নীতির মতো সমস্যাগুলো সরাসরি সমাধান করতে হবে, যার সঙ্গে ভোটারদের সরাসরি স্বার্থ জড়িত। তাকে একটি বিস্তৃত নীতির এজেন্ডা প্রকাশ করতে হবে, যা বিস্তৃতভাবে স্টেকহোল্ডারদের আকৃষ্ট করে।
এর পর তাকে নিরাপত্তা ইস্যুতে একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে হবে; একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন একজন নেতা হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।
তার পর নওয়াজ শরিফকে বিভিন্ন প্রদেশ এবং জনসংখ্যার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাকে অবশ্যই সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার সমাধান করতে হবে, তাদের আস্থা ও সমর্থন অর্জন করতে হবে।
নওয়াজ শরিফ কি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং তার সংস্কার দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে সক্ষম হবেন? এর সময়ই উত্তর দেবে।
পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের গতিপথ নির্ভর করে তার রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিকূলতার মধ্যে সহযোগিতা করার এবং জাতির কল্যাণকে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখার ক্ষমতার ওপর।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনে প্রকাশিত ইসলামাবাদভিত্তিক কলামিস্ট ড. ফররুখ সেলিমের কলামের অনুবাদ।