Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

নওয়াজ শরিফ কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম

নওয়াজ শরিফ কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?

গত শনিবার (২১ অক্টোবর) ইসলামাবাদে অবতরণ করেন পিএমএল-এন সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ। এ সময় সঙ্গে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার। ছবি: জিও নিউজ

পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সুপ্রিমো নওয়াজ শরিফ লন্ডনে ৪ বছরের স্বেচ্ছানির্বাসন শেষ করে গতকাল শনিবার (২১ অক্টোবর) পাকিস্তানে ফিরেছেন। পাকিস্তানের তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবারের মতো ক্ষমতার মসনদে বসার চেষ্টায় আছেন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এ নিয়ে শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, জিও নিউজের অ্যাঙ্করপারসন এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাহজেব খানজাদা বলেছেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না নওয়াজ শরিফ।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালের জুলাই মাসে পানামা পেপারস মামলায় একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে। শীর্ষ আদালতের আদেশের কিছুক্ষণ পরই ‘দৃঢ় সংরক্ষণ’ থাকা সত্ত্বেও তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসারের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল যে, সংবিধানের ৬২ এবং ৬৩ অনুচ্ছেদের অধীনে অযোগ্য ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানের একটি জবাবদিহিতা আদালত নওয়াজকে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এর পাশাপাশি জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোর (এনএবি) সাথে সহযোগিতা না করার জন্য পিএমএল-এন সুপ্রিমোকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। অ্যাভেনফিল্ড সম্পত্তি দুর্নীতির রেফারেন্স দাখিল করেছিল দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটি।

একই বছর দ্বিতীয় কনভেনশনে আল-আজিজিয়া স্টিল মিলস অ্যান্ড হিল মেটাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেফারেন্সে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেড় বিলিয়ন এবং ২৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানাসহ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের নভেম্বরে লাহোর হাইকোর্ট (এলএইচসি) পিএমএল-এন সুপ্রিমোকে তার স্বাস্থ্যের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে চার সপ্তাহের জন্য বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয় এবং সরকারকে কোনো শর্ত আরোপ না করেই নো-ফ্লাই তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আদালত-অনুমোদিত অঙ্গীকারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার ফিরে আসার আশ্বাস দেওয়ার পরেও ফিরে আসেননি।

আদালত নওয়াজকে চার সপ্তাহের জন্য দেশ ছাড়ার অনুমতি দেয়, যা মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে বাড়ানো যায়। নওয়াজ একই বছরের ১৯ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লাহোর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হন, কিন্তু ফিরে আসেননি।

৭৩ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ অবশ্য আজ (২১ অক্টোবর) ইসলামাবাদে ফিরেছেন। ফেডারেল রাজধানীতে আইনি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর, পিএমএল-এন সুপ্রিমো লাহোরে পৌঁছেছেন- যেখানে মিনার-ই-পাকিস্তানে তার একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার কথা।

তার দোষী সাব্যস্ততা এখনও বলবৎ রয়েছে। তবে গত ১৯ অক্টোবর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নওয়াজের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার না করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। আবেদনে আদালতে হাজির হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

যদিও তিনি তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে আবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না কিংবা পাবলিক অফিসে থাকতে পারবেন না, তবে তার আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি আপিল করার পরিকল্পনা করছেন এবং তার দল বলছে, তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন।

জিও নিউজ স্পেশাল ট্রান্সমিশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে খানজাদা বলেছেন, দেখা যাক তিনি তার সমর্থকদের বোঝাতে সফল হন কিনা যে, তিনি দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারেন কিনা।

‘আপনি যদি তার ২৫ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকান, তাহলে আপনি তাকে একজন সৌভাগ্যবান রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখবেন, কারণ তিনি বার বার ফিরে এসেছেন,’ বলেন খানজাদা।

তিনি আরও বলেন, ‘স্টাব্লিশমেন্ট (সামরিক বাহিনী) এবং বিচার বিভাগ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা সত্ত্বেও পিএমএল-এন সুপ্রিমোকে রাজনৈতিক অসম্মান করা যায় না।’ 

তবে একই সাথে খানজাদা এও বলেন যে, কেউ তাকে (নওয়াজ) একজন দুর্ভাগা রাজনীতিবিদ বলে মনে করতে পারে, কারণ তিনি একবার অর্থাৎ ২০১৩ সালের নির্বাচন ছাড়া গত ২৫ বছরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি।

নওয়াজের অযোগ্যতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিএমএল-এন সুপ্রিমো আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

আদালতের রায় স্থগিত করা যেতে পারে, তবে তার আপিল এবং খালাসের রায় এত অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নাও হতে পারে, মন্তব্য করেন অ্যাঙ্করপারসন।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে খানজাদা বলেন, ‘এই সময়ের জন্য চ্যালেঞ্জটি আরও বড়। (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ চেয়ারম্যান) ইমরান খান তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা সত্ত্বেও (এখনও) একজন জনপ্রিয় নেতা।’

অপরদিকে পিএমএল-এনের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ১৬ মাসের পারফরম্যান্স ভালো নয়। এ বিষয়ে অ্যাঙ্করপারসন বলেন, সাবেক ক্ষমতাসীন দল জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাবেক সরকার মূল্যস্ফীতিকে আকাশচুম্বী করেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম