Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

গাজাবাসীর তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন জামিল ও তার গাধা 

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২১ পিএম

গাজাবাসীর তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন জামিল ও তার গাধা 

ফিলিস্তিনি যুবক জামিল আল কারৌবি। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। এরপর পরিবারের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে নিজের গাধা ও মালবাহী গাড়ি নিয়ে গাজার গর্তযুক্ত রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন প্রতিবেশীদের বিশুদ্ধ খাবার পানি জোগাড় করার জন্য। গত ৯ দিন ধরে এটিই তার নতুন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। 

জামিল বলেন, আমি আমার বন্ধু আলমন্ডের (গাধা) সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি। সে যদি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে পানির ট্যাংকি ভরা ও আশপাশের প্রতিবেশীদের বিতরণে আমাকে সাহায্য করে তাহলে আমি তাকে প্রতিদিন একটি অতিরিক্ত ব্যাগ খাবার দেব। ‘এরপর থেকে সে আমাদের চুক্তি রেখেছে’- যোগ করেন তিনি। 

যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ৩৪ বছর বয়সি জামিল তার মালবাহী গাড়িতে করে সবজি বিক্রি করতেন। তবে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি ও তার বন্ধু আলমন্ড যতটা সম্ভব মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। 

কয়েক বছর আগে জামিল (যার নামের অর্থ আরবি ভাষায় ‘সুন্দর’) তার বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে একটি কূপ পেয়েছিলেন। এখন তিনি পরিবারের পানির চাহিদা মেটানোর আগে দুটি বড় ট্যাংকি পূরণ করেন। এরপর গাড়িতে করে পানি নিয়ে আশপাশে ঘুরে বেড়ান। প্রতিবেশীদের ডেকে তাদের গ্যালন, ট্যাংক ও পানির ব্যাগগুলো ভরার জন্য নিয়ে আসতে বলেন। 

জামিল তার মা, স্ত্রী এবং তার চার সন্তানের সঙ্গে বসবাস করেন। এক সপ্তাহেরও বেশি আগে ইসরাইলি বাহিনী পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় গাজায়। তবে তাদের কূপে প্রতিবেশীদের জন্য পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। 

জামিলের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং সেই বিশ্বাসকে বাস্তবে প্রয়োগ করছেন। তিনি পানির জন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করেন না, যদিও তার নিজের শ্রমজীবী পরিবার অবশ্যই এটি ব্যবহার করতে পারে।

জামিল বলেন, আমি পানি বিক্রি করি না, আমি বিনামূল্যে বিতরণ করি। আমি যদি আমার প্রতিবেশীদের সাহায্য না করি, তাহলে কে তাদের সাহায্য করবে? ইসরাইল? আমি এটাকে সন্দেহ করি।

জামিলের একজন প্রতিবেশী বলেন, পানি অত্যাবশ্যক ছিল, তারা ইন্টারনেট এমনকি বিদ্যুৎ ছাড়া বাঁচতে পারেন, তবে পানি ছাড়া নয়।

তারা বলেন, জামিল না থাকলে আমরা কী করতাম তা আমি জানি না। আমরা পানি আনার জন্য সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেখানে খুব ভিড় এবং সেখানকার পানিও পরিষ্কার নয়।

জামিল বলেন, তিনি আরও বেশি লোককে সাহায্য করার জন্য তার আশপাশের বাইরে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ধ্বংসস্তূপের কারণে রাস্তায় তার গাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। 

গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করার সময় তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন- এমন উদ্বেগ ও ভয় তার পরিবারের রয়েছে। তবু তারা জামিলকে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে চান না।

জামিলের ছোট ছেলে ওসামা বলেন, আমার বাবা মনে করেন, যে কোনো লোক এমনকি অপরিচিতদের সাহায্য করা তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি (জামিল) সবচেয়ে সুখী এবং গর্বিত হন, যখন লোকেরা তৃষ্ণার্ত না হয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো গাজাজুড়ে নির্বিচারে পড়ছে। বিপজ্জনক সময়েও আমরা বাবকে আটকাতে পারি না। মানুষ আমাদের ভালোবাসে এবং বিনিময়ে আমরা এটাই চাই।

পানি ছাড়াও কখনো কখনো জামিল লেবু, আলু এবং তার বাগানে যা কিছু পান তা তার পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হিসেবে প্রতিবেশীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। 

এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি এই যুবক বলেন, আমার কাছে অতিরিক্ত থাকলে বিনামূল্যে সবজি দিতে আমার আপত্তি নেই। এটি আমাকে এবং মানুষকে সুখী করে তোলে।
তার প্রচেষ্টা ও সাহস প্রতিবেশীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রতিবেশীরা প্রায়ই তার গাধার জন্য খাবার নিতে জোরাজুরি করে, যাতে আলমন্ড জামিলকে প্রতিদিন এই মহান কাজে তাকে সাহায্য করতে পারে।

জামিল রাজনীতি করেন না বা যুদ্ধ কখন শেষ হবে তা তিনি জানেন না। তিনি শুধু জানেন তার প্রতিবেশীরা তৃষ্ণার্ত।

‘যতদিন আমার প্রতিবেশীদের প্রয়োজন হবে, আমি সেখানে থাকব এবং যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করব’- বলেন জামিল।
 
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে দুই হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১১ হাজার মানুষ। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছেন। সেই সঙ্গে গাজায় বিদ্যুৎ-জ্বালানি-খাদ্যপণ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম