গাজায় স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫৯ এএম
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান পরিচালনার জন্য সেনাদের জড়ো করেছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। ইসরাইলি কর্মকর্তারা একটি দীর্ঘ ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকা ধূলোয় মিশে গেছে। শনিবার হামাস যোদ্ধা ইসরাইলে প্রবেশ করে হামলার জবাবে গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১ হাজারের বেশি এবং গাজায় ৭৮০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
হামাস ও ইসরাইল একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রাখায় নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গাজায় চলমান সংঘাত আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়তে পারে এই সংঘাতে। ইতোমধ্যে সোমবার ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে গুলিবর্ষণে গোষ্ঠীটির চার সদস্য নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ইসরাইলের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানেরও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যতম পুরনো ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত একটি রক্তাক্ত ও ভয়াবহ পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল। আর হামাস চেষ্টা করছে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টির।
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে গাজাকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসরাইল। ২৩ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি উপত্যকায় অবরুদ্ধ। এর আগে হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ করলেও গোষ্ঠীটিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়নি তেল আবিব। কিন্তু এখন সেই পথেই হাঁটছে দেশটি।
মঙ্গলবার সকালে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেখট সাংবাদিকদের বলেছেন, অতীতের চেয়ে এবারের অভিযান বড় ও ভয়াবহ হতে চলেছে। আমরা হামাসের বিরুদ্ধে খুব আগ্রাসী থাকব। আমাদের সবার ধারা বদলানো উচিত।
মঙ্গলবার পর্যন্ত স্পষ্ট নয় কখন গাজায় স্থল হামলা শুরু করবে ইসরাইল। কয়েক লাখ রিজার্ভ সেনাকে সমাবেশিত করা ছাড়াও হাজারো ইসরাইলি সেনা দক্ষিণাঞ্চলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছে, সীমান্ত রক্ষায় রয়েছে আরও অনেক সেনা। আশঙ্কা করা হচ্ছে সেখানে এখনও হামাস যোদ্ধারা লুকিয়ে রয়েছে।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা গাজার বাসিন্দাদের উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইসরাইল ও মিসর সীমান্তে ঘেরা গাজাবাসীর সামনে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। গাজাবাসীরা কোথায় যাবে জানতে চাইলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, যারা উঠে দাঁড়াতে পারে তাদের প্রতি আমার পরামর্শ চলে যান।
মিসরীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার রাফাহ ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইসরাইলের বোমাবর্ষণের পর। এমনকি শান্ত সময়েও বিশেষ অনুমতি ছাড়া গাজার লোকেরা এই ক্রসিং পার হতে পারেন না। এই অনুমতি পাওয়া খুব কঠিন।
পরে রিচার্ড হেখট নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, আমি বলেছি তাদের উচিত রাফাহ ক্রসিং উন্মুক্ত আছে কিনা যাচাই করা। আমি জানি না তা চালু আছে কিনা। ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই ক্রসিংয়ের দায়িত্বে নেই।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে ইসরাইল। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা বা পুরোপুরি উপত্যকা দখল করার চেষ্টা করলে দীর্ঘ স্থায়ী যুদ্ধ শুরু হতে পারে। হামাস ও অপর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাজারো যোদ্ধা রয়েছে, তাদের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং হামলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে শহরের সুবিধা তারা পাবে।
কাতারভিত্তিক স্বাধীন গবেষণাকেন্দ্র সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ান স্টাডিজ-এর অনাবাসিক ফেলো মুইন রাব্বানি বলেছেন, আমার এখনও মনে হয় পুরোপুরি গাজা দখল কঠিন হবে। এমন একটি অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে যেখানে ২০০৫ সালের পর ইসরাইলি সেনারা অবস্থান করেনি। আর ইসরাইলি গোয়েন্দাদের কোনও সূত্র না দিয়েই হামাস এই পুরো হামলার পরিকল্পনা করতে সক্ষম হয়েছে।
গাজায় পরিকল্পিত অভিযানের জন্য ৩ লাখের বেশি রিজার্ভ সেনাকে জড়ো করেছে ইসরাইল। কিন্তু অবিরাম বিমান হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে এমন অভিযান শুরুর ক্ষেত্রে জটিলতায় রয়েছে ইসরাইলি সরকার। হামাসের হাতে বন্দি থাকা শতাধিক সেনা ও বেসামরিককে মুক্ত করার কথাও বিবেচনা করতে হচ্ছে তাদের। হামাসের সামরিক শাখা সোমবার হুমকি দিয়ে বলেছিল, ইসরাইল বোমা হামলা অব্যাহত রাখলে জিম্মিদের হত্যা করা হবে। মঙ্গলবার হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ বলেছেন, লড়াই চলমান অবস্থায় জিম্মিদের নিয়ে কোনও আলোচনা হবে না।
২০০৮ সালের পর থেকে ইসরাইল চারটি পৃথক সামরিক অভিযান চালিয়েছে। প্রতিটি অভিযান অমীমাংসিত হিসেবে শেষ হয়েছে। হামাস উপত্যকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলোর নেতারা বলেছেন, আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনও ন্যায্যতা নেই, কোনও বৈধতা নেই এবং সর্বজনীনভাবে নিন্দা করা উচিত। আমাদের দেশগুলোকে ইসরাইলের নিজেকে রক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।