ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ফাঁস করলেন পালিয়ে যাওয়া ৩ রুশ সেনা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২০ এএম
ছবি: সংগৃহীত
জার্মানির বাভারিয়ার মিউনিখ শহরে চলছে অক্টোবর ফেস্ট। সেখান থেকে সামান্য দূরে বসবাস করেন ভ্যাসিলি। এটা তার আসল নাম নয়। নাম প্রকাশ করলে রাশিয়ায় তার পরিবারের ওপর আক্রমণ হতে পারে, তাই পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন তিনি।
রাশিয়া থেকে পালিয়ে জার্মানিতে এসে বসবাস করছেন এই রুশ সেনা কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন তিনি। মাসখানেক আগে জার্মানিতে পালিয়ে এসেছেন।
রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে বন্দুক চালানোর পলটনে কাজ করতেন ভ্যাসিলি। বহুদিন ধরেই সেনাবাহিনীর কাঠামো ও অবস্থা নিয়ে বিরক্ত ছিলেন এ কর্মকর্তা। কাজ ছেড়ে অন্য কিছু করার কথা ভাবছিলেন। তারই মধ্যে শুরু হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। ভ্যাসিলি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, আমার বাবা ইউক্রেনের। তাই ইউক্রেনের মানুষ আমার নিজের লোক। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
তিনি বলেন, কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অনুরোধ শোনেননি। তিনি ডিক্রি ঘোষণা করেন যে, যুদ্ধে না গেলে সেনা জওয়ান ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এই সময় কমান্ডারের কাছ থেকে ফোন পান ওই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: খেরসনে রুশ হামলায় নিহত ৩ নারী
যুদ্ধে যোগ না দিলে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোনো উপায় না দেখে দেশ ছেড়ে পালান ভ্যাসিলি।
জার্মানিতে এমন অনেক রুশ সেনা এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে অধিকাংশই যাচ্ছেন কাজাখস্তান ও আর্মেনিয়ায়। বেশ কিছু এনজিও তাদের পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে পৌঁছাতে হচ্ছে কাজাখস্তানে।
ভিক্টরও সেভাবেই কাজাখস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছেন, অন্তত ৫০০ রুশ সেনা আপাতত কাজাখস্তান ও আর্মেনিয়ায় আছেন। ভিক্টরও এই সেনার আসল নাম নয়। আপাতত কাজাখ রাজধানী আস্তানায় আছেন তিনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে কমিউনিকেশন অফিসার ছিলেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিমিয়ায় পাঠানো হয়েছিল তাকে।
যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখনো মনে পড়ে তার। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে তুলে তাদের বলা হয়েছিল, অনেকটা পথ যেতে হবে। তারা ইউক্রেনে প্রবেশ করেন।
ভিক্টর বলেন, ‘চোখের সামনে যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করতে দেখেছি। আমাদের কমান্ডার সে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বেসামরিক মানুষের ওপর আক্রমণ আমরা চালাইনি। অনেক পরে ইন্টারনেটে সেসব ঘটনা পড়েছি।’
এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ভিক্টর। তার পর পালিয়ে এসেছেন। ওই ভয়াবহতা আর মেনে নিতে পারেননি।
ইয়েভজেনিইও বাকিদের মতো পালিয়েছেন। রুশ সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটে কাজ করতেন তিনি। গরিব ঘরের ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন সামাজিক সম্মানের আশায়। ইউক্রেন যুদ্ধে তিনিও যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘কিয়েভের দিকে যাওয়ার সময় সঙ্গে কোনো যুদ্ধবন্দিকে রাখা হচ্ছিল না। কারণ তাদের রাশিয়া ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। রাস্তাতেই তাদের খতম করা হচ্ছিল।’
নিজে অবশ্য এমন কোনো হত্যার সঙ্গে যুক্ত নন বলে জানিয়েছেন এই সেনা।
বর্তমানে যুদ্ধের মূল এলাকা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসেও ছিলেন তিনি। জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর জন্য নিজেরাই নিজেদের পায়ে গুলি করতেন তারা। তার ক্ষেত্রেও এমনই ঘটনা ঘটেছে। বহু চেষ্টার পর পালাতে পেরেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম সাময়িক অভিযান চালাবেন যুদ্ধবাজ পুতিন। তিনি যে পুরোপুরি যুদ্ধে নেমে পড়বেন, আমরা ভাবিনি। পুতিন যে পাগল, তা আমরা বুঝিনি।’
তাদের মতো আরও বহু রাশিয়ান সেনা পাশের দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে