ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার আগে থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করেছিল। যুদ্ধের সময় ‘নিরপেক্ষ’ থাকার আহ্বান সত্ত্বেও মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের আরও নিবিড় সম্পর্ক সেই ব্যবধান বাড়িয়ে তুলেছে।
তাইওয়ানের ওপর দাবি আরও জোরালো করে চীন দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে সে দেশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কাটাতে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।
তবে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার বদলে ‘ডি-রিস্কিং’ বা অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি কাটাতে চাইছে পশ্চিমা বিশ্ব।
এমনই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বেইজিং সফর করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনর ভালদিস ডোমব্রভস্কিস।
বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে তিনি বলেন, চীনের নেতৃত্ব ঝুঁকির ধারণা কমাতে অনেক কিছু করতে পারে। শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ইউরোপে দুশ্চিন্তা ও অস্বস্তি বাড়াচ্ছে না।
চীনে ইউরোপীয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যায্য অধিকারের অভাব এবং সে দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের রাজনীতিকরণও সম্পর্কের অবনতির কারণ হয়ে উঠছে বলে ডোমব্রভস্কিস ইঙ্গিত করেন।
বিশেষ করে চলতি বছরে চীন কয়েকটি আইন প্রণয়ন করে জাতীয় স্বার্থ ও গুপ্তচরবৃত্তি প্রতিরোধের দোহাই দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে, সে বিষয়ে তিনি দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন।
তার মতে, এমন অবস্থায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পক্ষে চীনে সক্রিয় থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। সোমবার ডোমব্রভস্কিস চীনা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন। ইইউ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের ঘাটতি আরও বেড়ে চলায় তিনি দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছেন।
অন্যদিকে চীনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মনোভাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। বিশেষ করে ‘ডি-রিস্কিং’ নীতির মাধ্যমে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ চীনে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। ইইউ বাণিজ্য কমিশনরের কাছে সে বিষয়ে কৈফিয়ত চাইছে সে দেশ।
ডোমব্রভস্কিস অবশ্য তার ভাষণে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও বিশেষ দেশের ক্ষেত্রে এমন নীতি কার্যকর করছে না ইইউ। বরং সার্বিকভাবে অতিরিক্ত নির্ভরতার ঝুঁকি কমাতেই একাধিক উৎস থেকে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করতে চায় এই জোট। রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি কমানোর মাধ্যমেও সেই নীতি কার্যকর করা হচ্ছে।
প্রতিযোগিতার বাজারে ন্যায্য পরিবেশ রক্ষা করতেও ইইউ উদ্যোগ নিচ্ছে। চীন থেকে সস্তার ইলেকট্রিক যান যাতে ইউরোপের বাজার ছেয়ে না যায়, সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনে শুল্ক চাপানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চায় ইইউ। রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি নিয়ে গাড়ির দাম কৃত্রিমভাবে কমিয়ে ইউরোপের বাজার দখল করার চেষ্টা ন্যায্য নয় বলে মনে করে এই রাষ্ট্রজোট।
চীন অবশ্য এমন মনোভাবের কড়া সমালোচনা করছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘প্রোটেকশনিজম’ বা সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করছে বেইজিং।
সূত্র: ডয়চে ভেলে