সোনার প্লেটে মোড়ানো গাঢ় সবুজ রঙের ট্রেন। বিলাসবহুলতার প্রাচুর্যে ঘেরা ট্রেনটিতে উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্রেরও শেষ নেই। যেন ট্রেন নয় গোলাবারুদে ঠাসা চলন্ত ‘দুর্গ’।
সেই দুর্গে চড়েই মঙ্গলবার সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন (৩৯)। বিমানে যাতায়াত করতে বাপ-দাদার মতো ভয় পান কিমও। এজন্য মস্কোতে যাওয়ার উদ্দেশে নিজের বিলাসবহুল ট্রেনকেই বেছে নিয়েছেন এই রাষ্ট্রনেতা।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠকে যোগ দিতেই তার এ সফর।
কেন বিমানে চড়তে ভয় পান কিম?
কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাং এবং বাবা কিম জং ইল বিমানে চড়তে ভয় পেতেন। ‘উড়ান ভয়ের’ কারণেই তার বাবার বিদেশ সফর চীন ও রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রয়োজনের তাগিদে সাঁজোয়া ট্রেনে চড়েই ভ্রমণ করতেন।
উনের বাবা ও দাদা একটি বিমান পর্যবেক্ষণের সময় তার বিস্ফোরণ ঘটে। এর পর থেকেই ‘বিমান ভয়’ শুরু। পারিবারিক এ ‘ঐতিহ্য’ ধরে রেখেছেন কি জং ইনও।
২০১৯ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের জন্য সাঁজোয়া ট্রেনেই ভিয়েতনামে যান। চার হাজার ৫০০ কিমি. পথ ভ্রমণ করেন। যাত্রায় সময় লেগেছিল আড়াই দিন।
কী কী আছে কিমের ট্রেনে?
বুলেটপ্রুফ কামরাসহ এর মধ্যে বিলাসিতার আসবাবের কোনো অভাব নেই। আছে বড় বেডরুম ও বৈঠক রুম। রাখা আছে দীর্ঘ গোলাপি রঙের সোফা। যেখানে বসে সম্মেলনে যোগ দেন কিম। উচ্চ প্রযুক্তিগত যোগাযোগ সুবিধা দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো ট্রেন।
এই ট্রেন কতটা নিরাপদ?
পুরো ট্রেন বুলেট প্রুফ। দেয়াল ও মেঝেগুলো এমনভাবে তৈরি হয়েছে যা যেকোনো বিস্ফোরক থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে। জরুরি পরিস্থিতিতে পালানোর জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আছে একাধিক উন্নত অস্ত্র। সেই সঙ্গে সুপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডোরাও থাকেন। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, কিমের প্রধান ট্রেনের সঙ্গে আরও দুটি ট্রেন থাকে। যার একটি সামনের ট্র্যাকগুলো পরীক্ষা করে। অন্যটি তার নিরাপত্তা কর্মীদের বহন করে। নিরাপত্তা পরীক্ষার জন্য ট্রেনটিতে ভ্রমণের আগে ১০০ জন সুরক্ষা কর্মীকে স্টেশনে পাঠানো হয়। পুরো ট্রেনই সুরক্ষার একাধিক পরতে আবদ্ধ।
ট্রেনটি কত দ্রত চলে?
সব অতিরিক্ত সরঞ্জামের ওজনের কারণে ট্রেনটি প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৫৫ কিমি. (৩৫ মাইল) বেগে চলে।
উনের বিমান সফর
উন সাতবার বিদেশে সফর করেছেন। চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরে সফর করেন। দুবার সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াতেও যান।
চীন ও সিঙ্গাপুরে ভ্রমণের সময় তিনি তার ব্যক্তিগত বিমানে উঠেছিলেন। বিমানটির নাম চাম্মাই-১। উত্তর কোরিয়ার নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়। ২০১৮ সালে চীন ভ্রমণের সময় এটিতে চড়েন।