সম্মেলন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা, মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যাতায়াত করবেন বাসে
কৃষ্ণকুমার দাস, কলকাতা থেকে
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৪ পিএম
জি-২০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। সম্মেলনস্থল প্রগতি ময়দান তথা ‘লুটিয়েন দিল্লি’ ঘিরে বিশেষ ট্রাফিক বিধি বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চালু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকে সব মন্ত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জি-২০ সম্মেলনে যাওয়া-আসার জন্য নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। নির্দিষ্ট নিরাপত্তারক্ষীদের প্রহরায়, নির্দিষ্ট সময়ে চলা বাসে করেই সভাস্থল ‘ভারত মন্ডপম’ কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হবে।
ইতোমধ্যে দিল্লি পৌঁছে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভারত সরকারের এই নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মমতা বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুধু নয়, আমাদের মতো দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীকেও নাকি ওই বাসে করেই যাতায়াত করতে হবে। সম্মেলনে আমাদের বাসে করেই নিয়ে যাবে।’ অর্থাৎ বিহারের নীতিশ কুমার, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তামিলনাড়ুর স্টালিন থেকে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির মতো দেশের ২৩ জন মুখ্যমন্ত্রীকেই বাসে করে আগামী ২ দিন দিল্লিতে ঘুরতে হবে। এখানেই থামনেনি মমতা, বলেছেন, ‘সবাইকে বোতলবন্দি করে রাখবে এই ক’দিন। ইচ্ছে হলে কেউ রাস্তায় নামতে পারবে না, মর্নিং-ইভনিং ওয়াক বন্ধ।’ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময়ে দিল্লিতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন মমতা। সেকথা উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন কিন্তু এত নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল না। সব সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করেছিলেন।’
ভারত সরকারের তরফে এদিন সব সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছে, জো-বাইডেনের মতো বিশ্বনেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই নয়াদিল্লিকে নিরাপত্তা ও নিয়ম-শৃঙ্খলার বিশেষ চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। কোথায় যেতে পারবেন আর কোথায় নয়, তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহান্তে কোথাও বেড়াতে যাবেন, তাহলে ভালো করে নির্দেশিকা দেখে নিন। সম্মেলন চলাকালীন দুদিন কার্যত খাঁচায় বন্দি হয়ে থাকবেন দিল্লিবাসী। এমনকি বিমান, ২২০টি রেল বাতিল করে চলাচলেও ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকেই ট্রাফিকসংক্রান্ত নিয়ম চালু হয়েছে। চলবে ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত। এই বিধিনিষেধের কারণে যানবাহনের সামগ্রিক চলাচল কঠিন হয়ে পড়বে। সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত প্রগতি ময়দানে সভাস্থল ভারত মন্ডপম ছাড়াও বিশ্ব নেতারা দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভবনগুলো পরিদর্শন করবেন বলে জানা গিয়েছে। তাদের নিরাপত্তা এবং মসৃণ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য, নয়াদিল্লি এলাকায় বসবাসকারী লোকদের জন্য বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নয়াদিল্লি এলাকায় বাসিন্দাদের শহরে ঢোকা এবং বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু বাইরে থেকে যারা শহরে ঢুকবেন তাদের জন্য একটি বিশেষ পাশের প্রয়োজন হবে। শনিবার সকাল ৫টা থেকে রোববার রাত ১১টা ৫৯ পর্যন্ত কোনো তিন-সিটের রিকশা (টিএসআর) এবং ট্যাক্সিকে নয়াদিল্লিতে ঢোকা বা চলাচল করতে দেওয়া হবে না বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে।
জি-২০ সম্মেলন চলাকালীন ভারতের রাজধানীকেন্দ্রিক ২০০র বেশি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ৯০টির বেশি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর ১০০র বেশি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য নয়াদিল্লির ভেতরে অবস্থিত হোটেলগুলোতে বৈধ বুকিংসহ প্রকৃত বাসিন্দা ও পর্যটকদের বহনকারী ট্যাক্সিগুলোকে প্রবেশ এবং চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। দিল্লি পুলিশের তরফে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে এলাকার মধ্যে ভ্রমণকারী বাসিন্দা এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদানকারীরা পরিচয়পত্রসহ প্রামাণ্য নথি সঙ্গে রাখুন। এছাড়াও ৮ সেপ্টেম্বর থেকে নয়াদিল্লিতে সব অফিস, থিয়েটার, রেস্তোরাঁ ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। তবে নয়াদিল্লিসহ সমগ্র দিল্লিতে সব ওষুধ দোকান, মুদি দোকান, দুধের বুথ, সবজি-ফলের দোকান এবং এটিএম খোলা থাকবে বলে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে।