জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন
দিল্লি যেন দুর্গ, আকাশে যুদ্ধবিমান, ছাদে ছাদে স্নাইপার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৭ পিএম
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত। নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে সম্মেলনস্থল, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জন্য হোটেল আর পর্যটনের জায়গাগুলো। ক্রমাগত দিল্লির আকাশে টহল দিচ্ছে ভারতের এয়ার ফোর্স আর সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। উচ্চ ভবনগুলোর বাড়তি নিরাপত্তায় ছাদে ছাদে বসানো হয়েছে আর্মি স্নাইপার। পাশাপাশি কাজ করছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) কমান্ডোরা। এমনকি সম্ভাব্য হুমকি বেলায় আছে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম। নয়াদিল্লিজুড়ে এখন কঠোর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ।
শুক্রবার নয়াদিল্লির রাস্তা ছিল জনমানবহীন আর নির্জন। যানবাহন আর পরিচয় তল্লাশিতে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। ঢুকতে পারছে না মাছিও এক কথায় পুরো নয়াদিল্লিই এখন দুর্গ। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু।
এদিন সকাল ৫টা থেকে রোববার রাত ১১.৫৯ পর্যন্ত নয়াদিল্লিকে নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ল্যান্ডমার্কগুলো দর্শনার্থীবিহীন। সম্মেলনস্থল আর হোটেলগুলোর আশপাশে বন্ধ ওষুধ ব্যতীত সব অনলাইন ডেলিভারি পরিষেবা।
হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে অথবা পিকনিকের উদ্দেশে ইন্ডিয়া গেট ও কর্তব্য পথে না যাওয়ার অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স, স্থানীয় বাসিন্দা ও সেই অঞ্চলে অবস্থানরত পর্যটকদের যথাযথ শনাক্তকরণ নথি উপস্থাপনের পর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
দিল্লি মেট্রো শুক্রবার সকাল ৪টা থেকে নেটওয়ার্কের সব লাইনে টার্মিনাল স্টেশন থেকে তার পরিষেবাগুলো শুরু করেছে। শনি ও রোববার পর্যন্ত এই পরিষেবা অব্যাহত থাকবে। নয়াদিল্লিতে বাজপাখি নজরদারিতে আছে কুকুর স্কোয়াড ও মাউন্টেড পুলিশসহ ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মী।
বিধিনিষেধ কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শহরের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে ন্যাভিগেশন অ্যাপ ‘ম্যাপমাইইন্ডিয়া’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ১৬টি রাস্তা ও জংশনকে ‘নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল’ হিসাবে গণ্য করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ডব্লিউ-পয়েন্ট, এ-পয়েন্ট, ডিডিইউ মার্গ, বিকাশ মার্গ (নয়ডা লিংক রোড-পুস্তা রোড), বাহাদুর শাহ জাফর মার্গ এবং দিল্লি গেট। নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।
সম্মেলন শুরুর আগেই দিল্লিতে পৌঁছেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই-৬ ও চীন থেকে এমএসএস-সহ আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার দল। দিল্লিতে অবস্থানকালে রাষ্ট্রপ্রধান ও তাদের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা সহজতর করবে তারা।
সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) প্রায় এক হাজার নিরাপত্তাকর্মীদের সমন্বয়ে একটি ‘বিশেষ ৫০’ দল প্রস্তুত করেছে। নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে দিল্লির ভেতরে ও বাইরে নেই কোনো অনির্ধারিত ফ্লাইট। সম্মেলনের দুদিন শুধু নির্ধারিত এয়ারলাইন ফ্লাইট আর বিশেষ জি-২০ সম্মেলনের ফ্লাইটগুলোকে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক (আইজিআই) বিমানবন্দরে অবতরণ ও টেক অফ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রোববার পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি দিল্লি পুলিশ অফিসার ডিউটিতে থাকবেন। এই নিরাপত্তাব্যববস্থাকে আরও জোরদার করতে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ পুলিশ স্টেশন। অভিযোগ দায়ের অথবা এফআইআর সহজতর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ থানাগুলোতে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা, কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ ওয়াকি-টকির মতো সুবিধা। আরও থাকবে পাবলিক ডিসপ্লে সিস্টেম। যেখানে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেখানো হবে।
যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দিতে সোমবার পর্যন্ত স্টেশন ব্যারাক অথবা থানার কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে পুলিশকর্মীদের। দিল্লি পুলিশের পিআরও সুমন নালওয়া বলেন, রাজধানীতে সম্মেলন চলাকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডাবল শিফটে কাজ করছে পুলিশকর্মীরা।