ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনায় একজনের ২২ বছর কারাদণ্ড
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৭ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা সংগঠিত করার দায়ে দ্য প্রাউড বয়েজ নামে একটি সংগঠনের সাবেক নেতাকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আমেরিকান গণতন্ত্রের আসনে আক্রমণ চালানোর দায়ে কোনো একজন মূল হোতার বিরুদ্ধে এটাই এখনো পর্যন্ত দেওয়া দীর্ঘতম সাজার ঘটনা।
গত মে মাসে হেনরি ‘এনরিকে’ টারিও নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে এ ধরণের অভিযোগ আনা হতো।
৩৯ বছর বয়সী টারিও দাঙ্গার সময় ওয়াশিংটনে না থাকলেও তিনি দাঙ্গায় কট্টর ডানপন্থী সংগঠনটির সংশ্লিষ্টতায় সহায়তা করেছেন। ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় এক হাজার একশ’র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার তার সাজা ঘোষণার আগে, টারিও ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির দাঙ্গার ঘটনায় নিজের ভূমিকার জন্য পুলিশ এবং ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চান। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেস ভবনে হামলা চালায় যেখানে জো বাইডেনের জয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছিল।
ওয়াশিংটনের ফেডারেল কোর্ট হাউজে তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত লজ্জিত এবং হতাশ কারণ তারা দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার বাকিটা জীবন এই লজ্জা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে।’
কমলা রঙের কারাগারের পোশাক পরা টারিও আরো বলেন: ‘আমি আমার নিজেরই সবচেয়ে খারাপ শত্রু ছিলাম। আমার অকারণ গর্ব আমাকে বুঝিয়েছিল যে, আমি একজন ভুক্তভোগী এবং আমাকে অন্যায্যভাবে টার্গেট করা হয়েছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হেরে গেছেন উল্লেখ করে টারিও বলেন: ‘আমি রাজনৈতিকভাবে গোঁড়া নই। কারো ক্ষতি করা বা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়াও আমার লক্ষ্য ছিল না। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া যে সম্ভব সেটা আমি মনেও করতাম না।’
টারিও বিচারকদের বলেন, ‘আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে আপনি আমার কাছ থেকে আমার চল্লিশের দশক ছিনিয়ে নেবেন না।’
এর আগে এক পর্যায়ে তাকে চোখ থেকে অশ্রু মুছতে দেখা যায় এবং তার মা বিচারকদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
প্রাউড বয়েজের ন্যাশনাল চেয়ারম্যান ছিলেন টারিও। এটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কট্টর ডানপন্থী এই সংগঠনটি নিজেদেরকে শুধু পুরুষদের পানশালা বা ‘অল মেল ড্রিংকিং ক্লাব’ বলে বর্ণনা করতো।
তারা নিজেদের ট্রাম্পের পদাতিক সেনা মনে করতো এবং প্রায়ই রাস্তায় কট্টর বামপন্থী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সক্রিয়কর্মীদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হতো।
মঙ্গলবার তার আইনজীবী তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, তার মক্কেল একজন ‘কীবোর্ড নিনজা’ এবং ‘বিপথগামী দেশপ্রেমিক’ যিনি ‘আবোল-তাবোল কথা বলেন’ কিন্তু সরকার উৎখাত করার মতো কোনো ইচ্ছা তার ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ টিমোথি কেলি অবশ্য তুলে ধরেন যে, টারিও এর আগে তার কোনো কাজের জন্য কখনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।
বিচারক কেলি বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার ষড়যন্ত্র একটি মারাত্মক অভিযোগ। এই ষড়যন্ত্রের মূল নেতা ছিলেন টারিও।’
এরআগে মে মাসে টারিওর বিরুদ্ধে বাধা প্রদান ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, নাগরিক বিশৃঙ্খলা এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
প্রসিকিউটররা তার কাজকে ‘সুচিন্তিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দাবি করেছেন। তবে প্রতিপক্ষ ১৫ বছরের সাজার আবেদন করে।
বিচারকরা সাজা ঘোষণার সময় টারিও নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আদালত থেকে চলে যাওয়ার সময় টারিও পাবলিক গ্যালারি থেকে তার পরিবারের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ান এবং শান্তির চিহ্ন প্রদর্শন করেন।
তার আইনজীবীরা বলছেন যে, তিনি আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।