উত্তর কোরিয়ায় খাদ্যশস্যের দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট
চরম ভোগান্তিতে ‘ফুটপাত ব্যবসায়ীরা’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম
সিন্ডিকেটের কবলে এখন এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়াও। হু হু করে বাড়ছে দেশটির খাদ্যশস্যের দাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আইন প্রয়োগকারী হর্তাকর্তারা। দোকানগুলো একজোটে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করছে শস্যের দাম। রাষ্ট্রীয় বিধি লঙ্ঘন করে নিজস্ব মূল্য নির্ধারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই মাসের শেষ থেকেই বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা পর্যবেক্ষণ। প্রাথমিক ফলাফলে দেশটির দক্ষিণ হোয়াংহাই, উত্তর হোয়াংহাই প্রদেশ, সারিওন, কোকসান এবং তোসান কাউন্টির বেশ কয়েকটি শস্যের দোকানে ইতোমধ্যেই দুর্নীতির বিষয়টি ধরা পড়েছে। ইয়োনহাপ নিউজ।
জুনের শুরুতে দেশটিতে এক কেজি চালের মূল্য ছিল ৫,৫০০ ওন। ভুট্টার কেজি ছিল ২,৮০০ ওন। বর্তমানে বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ৫,৮০০ এবং ৩,০০০ ওন। জিজ্ঞাসাবাদে দোকানের ব্যবস্থাপক দাবি করেন, আগের বছরের ফসল খারাপ এবং আমদানিকৃত শস্যের অভাবে দাম বাড়াতে হয়েছে। সারা দেশে পরিদর্শন প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও দুর্নীতির মামলা সামনে আসার আশা করা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। দুর্নীতি এবং মূল্য হেরফের নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তবে দেশটির সমগ্র পরিস্থিতি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
এদিকে মহামারির পর থেকে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন দেশটির ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। কেননা, কর্তৃপক্ষ রাস্তায় তাদের ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ নিয়ে পুলিশ অফিসার এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিয়মিত দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। ফুটপাতে যেসব ব্যবসায়ী খাবার বা শাক-সবজি বিক্রি করেন তাদের স্থানীয় বাজারে দোকান ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই। জীবিকা নির্বাহে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। সারা দিন রাস্তায় কাটালেও দিনে ১,০০০ ওন উপার্জন করতে পারেন না।
পুলিশের ক্রমাগত হয়রানির মুখে ব্যবসায়ীরা পালটা লড়াই শুরু করছেন। এমনকি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও মুখোমুখি সংঘর্ষেও লিপ্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি দুজন ফুটপাত ব্যবসায়ী এক সাক্ষাৎকারে নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাদের মধ্যে একজন উত্তর হামগিয়ং প্রদেশের, অন্যজন ইয়াংগাং প্রদেশের। উত্তর হামগিয়ং প্রদেশের রাস্তায় শাক-সবজি বিক্রি করে এমন একজন বলেন, ‘আমাদের পকেটে কিছু না থাকলে আমাদের ক্ষুধার্ত থাকতে হবে। অর্থ উপার্জনের জন্য আমাদের সব কিছু বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ফুটপাতে ব্যবসা করলে প্রতিদিনের পুলিশি হয়রানিতে আমরা কিছু বিক্রি করতে পারি না। দিন শেষে লোকসান নিতে বাধ্য হই। অনাহারের এখন আমাদের কেবল রাগ অবশিষ্ট আছে।’ আরেকজন বলেন, ‘আমরা রক্ত বা অশ্রুবিহীন মানুষ, আমি আমার তিন বছরের বাচ্চাকে আমার পিঠে নিয়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা হেঁটে শহরে যাই। অথচ দোকান পেতে আমার মালামাল বের করার আগেই পুলিশরা আমাকে অবিলম্বে চলে যাওয়ার জন্য চিৎকার করে। আমি যখন নিজের দিকে তাকাই, আমার পিঠে বাচ্চা নিয়ে তীব্র রোদে জিনিসপত্র বিক্রি করার জন্য ঘুরে বেড়াই, তখন আমি ভাবি কেন আমাকে এভাবে বাঁচতে হবে। সেই দুঃখ যখন রাগে পরিণত হয় তখন আমি পুলিশের সঙ্গে লড়াই করি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখনো খেতে পারে। সমস্যা আমাদের মতো মানুষের। আমরা দুঃখী, কারণ আমাদের শান্তিতে অর্থ উপার্জন করারও অনুমতি নেই।’