অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারাতে পারেন জেলেনস্কি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের কোনো ইঙ্গিতই যেন মিলছে না। টানা যুদ্ধে বেঁকে বসেছে ইউক্রেনের সেনারাও। পশ্চিমা ও ইউরোপীয় আমলারাও ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও দেশটিকে নিয়ে নানান জল্পনা শুরু করেছেন।
এর মধ্যে অনেকেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের সাবেক অ্যানালিস্ট ল্যারি জনসন।
বলেছেন, ‘তিলে তিলে ক্ষোভ জমতে থাকা অসন্তুষ্ট সেনাবাহিনীই রুখে দাঁড়াবে তাদের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। রক্তক্ষয়ী ভয়ংকর সেনাঅভ্যুত্থানও হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি। কেননা সময় যত পার হচ্ছে, কিয়েভের টিকে থাকার সক্ষমতা কমছে। অন্যদিকে ক্রমেই বেড়ে চলেছে পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীলতা।
২৫ আগস্ট (শুক্রবার) টিভি উপস্থাপক ক্লেটন মরিসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। একই দিনে মার্কিন দৈনিক ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার পথে ঠেলবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ক্লেটন মরিসের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা ভিডিওটিতে ল্যারি জনসন স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আগামী ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হতে পারে জেলেনস্কিকে। কারণ, পূর্ব রণাঙ্গনে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।’
এসময় তিনি জাপোরিঝিয়াসহ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে পালটা আক্রমণে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেন।
আরও বলেন, পশ্চিমা প্রশিক্ষণ, ন্যাটোর ট্যাঙ্ক-সাঁজোয়া যান এবং অন্যান্য অস্ত্র সহযোগিতার পরও ইউক্রেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। জনসনের মতে, যেভাবে সংঘাত এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে দেশ হিসাবে ইউক্রেনের টিকে থাকাটাই ‘গভীর সন্দেহ’।
তবে জনসনই প্রথমবার সামরিক অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেননি। চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসের কর্মকর্তা স্কট রিটারও এমন আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ‘সম্ভবত ইউক্রেনের প্রতিটি বিধ্বস্ত ব্রিগেডেই জেলেনস্কির বিরুদ্ধে বিরক্তি জমা হচ্ছে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্সস্থানীয় আরেকটি সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদনেও জেলেনস্কির মৃত্যু-পরবর্তী সরকারও ঠিক করে রাখার খবর চাউর হয়।
বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণ কোনো জান্তা শাসনের অধীনেই পরিচালিত হবে সে সরকারব্যবস্থা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি স্রোতের প্রতিক‚লেই চলছে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির।
এদিকে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ জানায়, নিজের এবং ইউক্রেনের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ে মস্কোর সঙ্গে সমঝোতায় কিয়েভকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
রয়্যাল ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো সামান্থা ডি বেন্ডারন বলেন, ‘ইউক্রেনে যা ঘটছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমবে এবং ইউরোপীয়দের পক্ষে আমেরিকানদের বোঝানো কঠিন হবে যে ইউক্রেন আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা।’
চলমান এ দীর্ঘ যুদ্ধে ন্যাটোও আশাহীন হয়ে পড়েছে। জোটের অনেক সদস্য কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে বর্তমানে খুব সন্দিহান। কেননা, প্রতিটি রণক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক শক্তি প্রমাণিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর পালটা আক্রমণে সাফল্যের আশা ক্রমেই ব্যর্থ হচ্ছে। ইউক্রেনের অন্য মিত্ররা ও কিয়েভ বাহিনী এই বছর যুদ্ধের অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
অনেকের ধারণা, দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা এ যুদ্ধ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের হতে পর্যাপ্ত সামরিক সহায়তা সত্ত্বে ইউক্রেন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে শুধু কৌশলগত অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। শরৎকালে আর্দ্র এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও গোলাবারুদের মজুদ প্রায় ফুরিয়ে আসছে এবং ২০২৪ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে অস্ত্রের উৎপাদনও বাড়ানো হবে না। এমনকি এফ-১৬ ফাইটার সম্ভবত আগামী বছর পর্যন্ত আসবে না। যুদ্ধের আক্রমণ প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তাও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য পরবর্তী তহবিল বিল পাশ করার জন্য রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলছেন, আগামী বছর যুদ্ধে কোনো উন্নতি না হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকে আলোচনার দিকেই ঠেলে দেবেন।
ইউক্রেনের অন্যা মিত্ররাও কিয়েভের বাহিনী এই বছর যুদ্ধের অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন। অনেকের ধারণা, অধিক সময় ধরে চলতে থাকা এ যুদ্ধ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।