রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা দল ইয়েভজেনি প্রিগোজিন (৬২) মস্কোর বাইরে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে ধরে দেওয়া হচ্ছে। বুধবারের দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা নিহত যাত্রীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে প্রিগোজিনের পরিবার এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া না জানালেও স্ত্রী লিউবভ ও ছেলে পাভেল তার ব্যবসা সামলাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে কী কী ব্যবসা প্রিগোজিনের ছিল তার মৃত্যুরহস্যের মতো সেটিও সবার অজানা।
প্রিগোজিনের মোট সম্পদের পরিমাণ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। প্রিগোজিনের পরিবারের সদস্যদের অনেকেই ২০২২ সাল থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে ছিলেন। এপ্রিল মাসে একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছিল ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
প্রিগোজিনের মা ভায়োলেটা প্রিগোজিনা
ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মা ভায়োলেটা প্রিগোজিন (৮৩)। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তার নাম। পরবর্তী সময়ে তাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিলে জিতে যান তিনি।
ইইউ-এর জেনারেল কোর্ট মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘শুধু তাদের (ভায়োলেটা ও প্রিগোজিন) পারিবারিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্তির ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়।’
২০১৮ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে ‘কালারস অব লাইফ’ নামে একটি আর্ট গ্যালারি খোলেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে একটি আর্ট শো চালু করেছিলেন ভায়োলেটা। শো চলাকালীন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, ‘প্রদর্শনীটি তৈরির জন্য আমি আমার পুরো পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
স্ত্রী লিউবভ প্রিগোজিন
ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের স্ত্রী লিউবভ প্রিগোজিন (৫৩)। একজন ফার্মাসিস্ট থেকে হয়ে উঠেছিলেন সফল ব্যবসায়ী। সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের নিষেধাজ্ঞার তালিকা অনুযায়ী, লিউবভ ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের প্রতিষ্ঠিত কনকর্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনসালটিং এলএলসি-এর সহায়ক সংস্থা আগাত এলএলসি’র মালিক। ২০২২ সালে ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও ইইউ’র নিষেধাজ্ঞার তালিকায় লিউবভকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
লিউবভের ব্যক্তিগত তথ্য খুব কমই জানা যায়। রাশিয়ার একটি নিউজ আউটলেট নিউ ইজভেস্টিয়া তাকে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে বর্ণনা করেছে। লিউবভ সেন্ট পিটার্সবার্গে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট, চকলেট মিউজিয়াম, একটি চকলেট কারখানা ও একটি খুচরা আউটলেটের মালিক।
ছেলে পাভেল প্রিগোজিন
ভাড়াটে যোদ্ধা দল ওয়াগনারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের ছেলে পাভেল প্রিগোজিন (৩১)। সিরিয়া যুদ্ধে ওয়াগনারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। সামরিক সেবার জন্য ওয়াগনারের ‘ব্ল্যাক ক্রস’ উপাধি পেয়েছিলেন।
এফটি প্রিগোজিনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। ২০২২ সালে ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার অধীনে ছিলেন।
বলা হয়েছিল, তিনি তার মা ও বোন পলিনার সঙ্গে ‘প্রিগোজিনের ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন’। তবে তারা কিভাবে প্রিগোজিনের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের মতে, লাক্তা পার্ক, ওওও; লাক্তা পার্ক প্রিমিয়াম, ওওও এবং লাক্তা প্লাজা সামে তিনটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাভেল। তবে এই সংস্থাগুলোর কাজ কী তা স্পষ্ট নয়।
মেয়ে পলিনা প্রিগোজিন
প্রিগোজিন কন্যা পলিনা প্রিগোজিনা (৩১)। প্রিগোজিনের ব্যবসায় যুক্ত থাকার জন্য পলিনার নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার তালিকায়। রাশিয়ার বাইরে তিনি ও তার ছোট বোন ভেরোনিকা শত শত অশ্বারোহী ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ইকোয়েস্ট্রিয়ান স্পোর্টস অনুযায়ী, ৬০০টিরও বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে পলিনা। এর মধ্যে দুটি প্রতিযোগিতায় জিতেছেন।
আরেক মেয়ে ভেরোনিকা প্রিগোজিন
ইয়েভজেনি প্রিগোজিনার আরেক মেয়ে ভেরোনিকা প্রিগোজিন (১৮)। এখন পর্যন্ত প্রিগোজিনের নিকটবর্তী পরিবারের একমাত্র সদস্য যাকে প্রকাশ্যে ইউএস অথবা ইইউ কর্তৃক অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
তবে এফটি রাশিয়ার করপোরেট রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ভেরোনিকা ২০২২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ হোটেল নিয়ন্ত্রণকারী একটি কোম্পানির মালিক হয়েছিলেন।