তীব্র দাবদাহে বিশ্বজুড়ে চলছে চরম অস্থিরতা। পিরামিডের দেশ মিসরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। তাপমাত্রা কখনো কখনো পৌঁছায় ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অতিষ্ঠ এ গরমে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না ছয়-সাত ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে এ চিত্র কিন্তু সব এলাকার নয়।
বিদ্যুৎ সরবরাহেও ব্যাপক শ্রেণিবৈষম্যের দেখা মিলছে মিসরে। রীতিমতো ‘গরিবের ঘরের বাতি নিভিয়ে ধনীদের ঘরে আলো’ জ্বালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কায়েরো, গির্জা এবং আলেকজান্দ্রিয়ার যে অংশগুলোতে মিলিটারি ও শক্তিশালী ব্যক্তিদের আবাসস্থল তাদের ঘরে একেবারেই লোডশেডিং হচ্ছে না। পর্যটন ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে রাজস্ব আদায় করা হয় বলে সেখানেও দেওয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। একই শহরগুলোর গ্রামীণ এলাকাগুলোতে সব ধরনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
অনেকের দাবি, পল্লি অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে পরে তা রপ্তানি করার জন্যই এমনটা করছে সরকার। এমনকি বিদ্যুৎ বাঁচাতে রাস্তার বাতি পর্যন্ত নিভিয়ে রাখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে মিসর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে।
হিউম্যান রাইটসের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যাডাম কুগল বলেছেন, ‘মিসরের সরকার দীর্ঘদিন ধরেই দেখিয়ে আসছে তারা মিসরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিনিময়ে নাগরিকদের অধিকারকে বিসর্জন দেয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ কম হলে নাগরিকদের খাদ্য, জল, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব অধিকার থেকেই তারা বঞ্চিত হয়।’
তবে কর্তৃপক্ষদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের জাতীয় গ্রিডের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত গরমে ফ্যান ও এয়ার কন্ডিশনারগুলো চালানোর ফলে বিদ্যুতের উচ্চ চাহিদা তৈরি হয়। অধিক চাহিদার জোগান দিতে গিয়েই বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে বিদ্যুতের ব্যবহার রেকর্ডমাত্রায় পৌঁছেছে, তবে এটি দেশের সরবরাহ ক্ষমতা অতিক্রম করেনি। ১৭ জুলাই বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা ৩৪,৬৫০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে নিজেদের ক্ষোভ ঝাড়ছেন।