‘নরকের আগুনে’ স্বর্গ পুড়ে ছাই
হাওয়াই দ্বীপে দাবানল, মৃত্যু বেড়ে ৫৫
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১০:০০ পিএম
![হাওয়াই দ্বীপে দাবানল, মৃত্যু বেড়ে ৫৫](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2023/08/11/image-705906-1691769603.jpg)
দাবানলের আগুনে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই ‘নরকের আগুনে’ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মার্কিনদের চোখে ‘পৃথিবীর স্বর্গ’খ্যাত এই দ্বীপপুঞ্জের রাজ্য। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫-তে। ধ্বংস হয়ে গেছে শত শত বাড়িঘর। বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। বিপর্যস্ত এলাকা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা বৃহস্পতিবারও মাউইজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। দাবানলকে আরও ভয়ংকর করে তুলেছিল উত্তরের উচ্চচাপ এবং দক্ষিণের হারিকেন ডোরার বাতাস আর শুষ্ক আবহাওয়া। প্রথমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে হাওয়াইয়ের একসময়ের রাজধানী, ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় পর্যটন শহর লাহাইনা থেকে। সবচেয়ে বেশি তীব্র রূপ ধারণ করে মাউয়ের পশ্চিম উপকূলের লাহাইনায়। বর্তমানে একানে আটকে আছেন শত শত পর্যটক। স্থানীয় অভিবাসীদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন বিমানবন্দরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি হনুলুলুর নেক্সটার মিডিয়া গ্রুপের কেএইচওএন টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেন, ‘আমাদের পরিস্থিতি কী ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। মানুষজনকে শুধু দৌড়াতে দেখছিলাম। শুনছিলাম শুধু চিৎকার আর বিস্ফোরণ। মনে হচ্ছিল আমরা নরকে আছি।’ দাবানলটিকে ‘হাওয়াইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলে অভিহিত করেছেন হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে জোশ গ্রিন বলেন, দাবানলের কারণে লাহাইনা শহরটির ৮০ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। যে কেউ এখন শহরটিকে দেখে বলবে, এটি বোমার আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে।
মাউইতে বর্তমানে বিদ্যুৎহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। গ্রিন জানায়, ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, একটি গির্জা ও একটি স্কুলসহ দাবানলের আগুনে প্রায় ১৭০০ ভবন ধ্বংস হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অন্তত ১৪,০০০। যাদের অধিকাংশই লাহাইনার বাসিন্দা। তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য ২০০০ ঘরের ব্যবস্থা করতে বলেছেন গভর্নর গ্রিন। নিঁখোজ রয়েছেন প্রায় ১০০০ মানুষ।
রাজ্যের পুনর্র্নির্মাণে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। আর সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ৮- ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কারও বাড়িতে অতিরিক্ত জায়গা থাকলে সেখানে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মাউই কাউন্টির মেয়র রিচার্ড বিসেন বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়া বাসিন্দাদের ‘আপাতত ফিরে না আসাই ভালো’ বলে জানিয়েছেন। তাদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর ‘অক্ষত না-ও থাকতে পারে’ বলে সতর্ক করেন। এ দিনেরই আরেক সংবাদ সম্মেলনে মাউইয়ের কাউন্টি ফায়ার চিফ ব্র্যাড ভেনচুরা বলেন, চারটি বড় দাবানল জ্বলছে এই অঞ্চলে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ছোট আগুনও দেখা দিয়েছে। হাওয়াইয়ে ছড়িয়ে পড়া এই দাবানলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘একটি বড় বিপর্যয়’ হিসাবে ঘোষণা দেন। হোয়াইট হাউজ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছে ফেডারেল সরকার। ১৩০টিরও বেশি হাওয়াই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের সক্রিয়া করা হয়েছে। হাওয়াই ওয়াইল্ডফায়ার ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন অনুসারে, অঞ্চলটিতে প্রায় ০.৫ শতাংশ ভূমি প্রতি বছর দাবানলে পুড়ে যায়। ১৯৬১ সালে হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডে সুনামির শিকার হয়েছিলেন ৬১ জন। তারপর থেকে এটিই হাওয়াই প্রদেশের সব থেকে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০তম অঙ্গরাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায় হাওয়াই।