নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে সরিয়ে নাইজারের ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২৬ জুলাইয়ের ওই অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় কঠোর অবস্থান নেয় পশ্চিম আফ্রিকার ব্লক ইকোনোমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোয়াস)।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে পুনর্বহাল না করলে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দেয় ব্লকটি। এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেয় সেনাবাহিনীকে। ৩০ জুলাই ব্লকের এক জরুরি বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেন নেতারা। ইকোয়াসের দেওয়া সেই ডেডলাইন শেষ হয়েছে রোববার। আলটিমেটাম শেষ হতেই যুদ্ধের ডামাডোল বাজছে নাইজারে। একদিকে সামরিক হস্তক্ষেপে প্রস্তুত ইকোয়াস। অন্যদিকে নাইজারের সামরিক বাহিনীও সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য তৈরি। এএফপি, রয়টার্স, সিএনএন।
যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে ইতোমধ্যেই রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা দল ওয়াগনারের দ্বারস্থ হয়েছে নাইজারের সামরিক বাহিনী। রোববার এপির খবরে বলা হয়েছে, অলাভজনক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউফান সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও সাংবাদিক ওয়াসিম নাসের একথা জানিয়েছেন। বলেছেন, অভ্যুত্থানকারী নেতা জেনারেল সালিফো মোদি সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ মালি সফর করেছেন। সেখানে তিনি ওয়াগনারের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাড়াটে যোদ্ধাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
শুক্রবার ইসিওডব্লিউএএস এর কমিশনার আবদেল-ফাতাউ মুসাহ বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তরের সব ধরনের সুযোগ দিয়েছি।’ সময়সীমা শেষ হলে কীভাবে এবং কখন সৈন্য মোতায়েন করা হবে তাসহ সামরিক হস্তক্ষেপের সব প্রস্তুতি ব্লকের রয়েছে বলে সতর্ক করেন তিনি।
সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলকে ঘিরে আঞ্চলিক চাপও বাড়ছে দেশটিতে। প্রতিবেশী দেশ নাইজেরিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সাহেলের সীমানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খাদ্য সরবরাহ জটিল হয়ে উঠছে। বাড়ছে মানবিক সংকট তৈরি হওয়ার ভয়।
ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী সেবাস্তিয়নে লেকর্নু শনিবার এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানকে দেশের সম্পূর্ণ স্বার্থবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, নাইজার বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি। এই দেশ প্রচুর পরিমাণ বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে পুনর্বহাল না করলে দেশে সংকট চলমান থাকবে।
তবে নাইজারে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী প্রতিবেশী দেশ আলজেরিয়া। শনিবার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে দেওয়া এক আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাদজিদ তেবোউন বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে যে কোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করি।’ এই ধরনের পদক্ষেপ ‘আলজেরিয়ার জন্য সরাসরি হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। লিবিয়া ও সিরিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তেবোউন বলেন, ‘সামরিক হস্তক্ষেপের অভিজ্ঞতা অর্জনকারী দেশগুলোর আজ অবস্থা কী?’ প্রসঙ্গত ক্ষমতা দখলের পরপরই ফ্রান্সের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করে নাইজারের সামরিক বাহিনী। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা প্যারিসে কার্যালয়ে নাইজারের প্রধানমন্ত্রী ওহউমাউদুউ মহামাদু এর সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, ‘নাইজারের ভবিষ্যৎ ও সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’