টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের তৃণমূল এমপি নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তিনি আর দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া যাদবপুরের তৃণমূলের আরেক সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তীর টিকিট পাওয়াও অনেকটা অনিশ্চিত।
তৃণমূল সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটকাণ্ডে নুসরাতকে প্রার্থী না করার বিষয়ে কার্যত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত ঘটনা অন্যদিকে মোড় না নিলে বসিরহাটে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
নুসরাতের কারণে বসিরহাট আসনে কতটা ‘রাজনৈতিক ক্ষতি’ হয়েছে তার হিসাব কষছে তৃণমূল। পাশাপাশিই খোঁজ চলছে নতুন ‘সংখ্যালঘু মুখ’। কারণ, দক্ষিণবঙ্গের ওই লোকসভা আসনে সংখ্যালঘু ভোটারের পরিমাণ প্রায় ৪৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিনেত্রী নুসরাতকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক তৃণমূলে সামগ্রিকভাবে ‘তারকা’দের টিকিট পাওয়ার বিষয়টিই অনেকটা ‘অনিশ্চিত’ করে তুলেছে। সে অর্থে যাদবপুরের এমপি মিমি চক্রবর্তীর টিকিট পাওয়াও খানিকটা ‘অনিশ্চিত’ বলেই মনে করছেন দলের নেতাদের একটা বড় অংশ।
তৃণমূলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, জনপ্রতিনিধি হতে গেলে তাকে আর ‘তারকা’ থাকা চলবে না। তাকে সব সময় রাজনৈতিক কর্মী হতে হবে। কারণ জনপ্রতিনিধির কাজকর্ম, জীবনযাপন, সংসদীয় বা পরিষদীয় ভূমিকা- সবই জনগণের নজরে থাকে। এসব বিষয়ে তাকে সচেতন থাকতে হবে।
ফলে ওই নেতার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, তৃণমূল আগামী লোকসভা ভোটে কোনো তারকাকে টিকিট দিলেও তাকে তার ‘তারকা’ পরিচয়টি ছেড়ে রাজনীতিতে আসতে হবে। গত কয়েক বছরে নুসরাত বা মিমি তেমন কিছু করেছেন বলে তৃণমূলের অন্দরের বক্তব্য নয়। এমপি হিসেবে তাদের ভূমিকা নিয়েও দলের একাংশের প্রশ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ বা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়টি আলাদা। কারণ তাদের মূল্যায়ন তৃণমূলের অন্দরে ভিন্ন। সায়নী বিধানসভা ভোটে হেরে গেলেও তিনি রাজনীতিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন বলে মনে করেন দলের নীতি নির্ধারকরা।
একইভাবে বাঁকুড়ায় সায়ন্তিকা হেরে গেলেও তিনি এলাকাতেই রাজনীতি করছন। তাকে নিয়ে তৃণমূল অন্যদের চেয়ে বেশি আশাবাদী। যে কারণে সব পরিকল্পনা মতো চললে বাঁকুড়া লোকসভায় সায়ন্তিকার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিন্তু নুসরাত ও মিমির এমপি হিসেবে ভূমিকা নিয়ে সংসদীয় দলের একাংশে যেমন বক্তব্য রয়েছে, তেমনই বসিরহাটের স্থানীয় তৃণমূলও নুসরাতের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয়। ফ্ল্যাট নিয়ে বিতর্কের ফলে তা আরও বেড়েছে।
বসিরহাটের এক তৃণমূল নেতা বলেন, দিল্লিতে যখন বিরোধী এমপিরা বিজেপির ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তখন আমাদের এক এমপি প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কলকাতায় সংবাদ সম্মেলন করে মেজাজ দেখাচ্ছেন!
প্রসঙ্গত গত সোমবার অভিনেত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ করা হয় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কাছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে নুসরাতের প্রতিষ্ঠান ৪২৯ জনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার টাকা করে নিয়েছিল ৩ বিএইচকে ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে। কিন্তু প্রায় ৯ বছর কেটে যাওয়ার পরও ফ্ল্যাট দেননি। সেই সময় নুসরাতের প্রতিষ্ঠান বলেছিল, রাজারহাট হিডকোর কাছে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে এই ৪২৯ জনকে। তিন বছরের মধ্যে ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল।
অভিযোগ, গড়িয়াহাট রোডে মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন এই ৪২৯ জন ফ্ল্যাট প্রত্যাশী। সেই বাবদ মোট ২৪ কোটি টাকা তোলা হয়েছিল সংস্থার পক্ষ থেকে।
নুসরাতের এই প্রতিষ্ঠান ৪২৯ জনকে বলেছিল, ৫০০ কাঠা জমি কিনে সেখানে নির্মাণ করা হবে ফ্ল্যাট। যদিও সময় মতো ফ্ল্যাট না পেয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছিলেন গড়িয়াহাট থানায়।
আলিপুর কোর্টেও এ নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে তারা এখনো ফ্ল্যাট কিংবা টাকা কোনোটিই পাননি। শেষ পর্যন্ত তাই ইডির কাছে নালিশ করেছেন তারা।
এ দিকে এ মামলায় আলিপুর আদালতের পক্ষ থেকে একাধিকবার তলব করা হয় নুসরাতকে।
তবে নুসরাতের দাবি, বাড়ি কিনতে সংস্থা থেকে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাংকের লেনদেনে কোনো অস্বচ্ছতা নেই।