বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা, সুনামির ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছিল শ্রীলংকার ট্রেন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১১:০৫ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪। ভারত মহাসাগর থেকে ধেয়ে আসা সুনামির কবলে পরে ভেসে গিয়েছিল শ্রীলংকার সমুদ্রদেবী বা সমুদ্রের রানি নামের ট্রেনটি। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল শ্রীলংকার ক্রিসমাস সপ্তাহান্তে।
যাত্রীসহ ট্রেনটি কলম্বোর ফোর্ট স্টেশন থেকে দক্ষিণের শহর গালে যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। ট্রেনটি যাত্রা শুরু করেছিল রোববার সকাল ৯টার পরে। কিন্তু পথিমধ্যে পড়তে হয় ভয়ঙ্কর সুনামির কবলে। জানা যায়, যাত্রাপথে তেলওয়াট্টার কাছে পেরালিয়া নামক একটি গ্রামের কাছে একটি বিশাল ঢেউ ট্রেনের মধ্যে আছড়ে পড়ে। এ দুর্ঘটনার ফলে ১৭০০ জন প্রাণ হারায় বলে অনুমান করা হয়েছিল। মাত্র ৭০০-৮০০ জন ছাড়া বাকিদের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ছুটির সপ্তাহান্তের পাশাপাশি এটি ছিল পূর্ণিমার দিন; যখন বৌদ্ধরা মাসিক প্রার্থনা করে ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে। তাই ট্রেনে থাকা বেশির ভাগ যাত্রী পরিবার, বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পেরালিয়া গ্রামের কাছে এসে একসময় ট্রেনটি সিগন্যালে থেমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ৬০ ফুট উঁচু হয়ে আসা সুনামির ঢেউ ঢুকে পড়ে ট্রেনের ভেতর। একটি দৈত্যকার ঢেউ গাছের ভেতর দিয়ে গর্জন দিয়ে ওঠে। তারপর রেলগাড়িটিকে রেললাইন থেকে ছুড়ে ফেলে। ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রেনটি ঘুরতে থাকে।
সুনামি ট্রেনটি গ্রাস করার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের ঘরবাড়ি ও গাছপালাও গ্রাস করে ফেলে। তেলওয়াট্টা সম্প্রদায়ের কয়েকশ লোক পানিতে ডুবে যায় ও তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
সৈন্যরা ধ্বংসাবশেষ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ করেছিল। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ থেকে কতজন যাত্রী ছিল তা অনুমান করা কঠিন ছিল। গ্রামবাসী নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে লাশের দিকে তাকিয়ে ছিল তাদের নিখোঁজ আত্মীয়দের খুঁজে পাওয়ার আশায়। পরের দিন শতাধিক মৃতদেহ বাটাপোলা হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালটি ছিল ঘটনাস্থল থেকে ১০ মাইল দূরে। হাসপাতালের বিল্ডিংয়ের ঘাসযুক্ত প্রাঙ্গণ যেন মৃতদেহে ভরে গিয়েছিল। সে ছিল এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। শুক্রবার ভারতের করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার জেরে ১৯ বছর পর নতুন করে আরেকবার শ্রীলংকার সেই সমুদ্র রানির সলিল সমাধির দৃশ্য ভেসে উঠল বিশ্ব মানবতার মানসপটে।