কেনিয়ায় ক্ষুধার তাড়নায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বন্যপ্রাণী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ১০:২১ পিএম
কেনিয়ায় বন উজাড়, খরা, চোরাচালানের কারণে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষুধার জ্বালায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে ভয়ংকর সব মাংশাসী পশু। জীবিকার প্রয়োজনে বছরের পর বছর খেয়াল-খুশিমতো গাছ কাটারই মাশুল গুনছে দেশটির উত্তর পূর্ব এলাকা শান্তা আবাকের এক যাজক সম্প্রদায়। এখন খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হিংস্র প্রাণীগুলো।
আক্রমণ রছে গবাদিপশুর ওপর। এতে রীতিমতো সংঘর্ষ সৃষ্টি হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও হিংস্র প্রাণীগুলোর সঙ্গে। মানুষ-সিংহ-হায়েনা-জিরাফ-জেব্রার এই টিকে থাকার লড়াইকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলছেন বিশ্লেষকরা। খবর গার্ডিয়ানের।
শান্তা-আবাকের সহকারী এলাকা প্রধান আবদি কাদির দুগো মহমুদ বলেন, হায়েনার আক্রমণে বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাতটি গবাদি পশু (উট) হারিয়েছি আমি। আরও বলেন, ‘আপনি এখানে অনেক উটের মৃতদেহ দেখতে পাবেন। কারণ আপনি যদি এই এলাকায় হাঁটেন তবে এগুলো থেকে চোখ এড়ানো কঠিন। এখানে এমন কোনো রাত নেই যে উটকে হায়েনা বা সিংহ এসে হত্যা করেনি।’ স্থানীয় পশুপালকরা বলছেন, খরা আমাদের গবাদি পশুকে সহজ শিকারে পরিণত করেছে। বিশেষ করে উট প্রায়ই পানি ও ঘাসের সন্ধানে বনের কাছাকাছি এলাকায় চলে যায়। তখন দুর্বল অনেক উট একটি হিংস্য বন্যপ্রাণীর অতর্কিত আক্রমণের সময় লড়াই করতে পারে না।
শান্তা আবাকের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুতালে থেকে বাসিন্দারা জানান, হায়েনারা সকালের মধ্যে মৃতদেহটি রেখে চলে যায়। রাতে এটি শেষ করতে আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। তখন শান্তা-আবাকের বাসিন্দারা হায়েনাগুলোকে মেরে ফেলার জন্য অর্ধ-খাওয়া উটের মৃতদেহতে বিষ দিয়ে রাখে।
গুতালের স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ হাসান (২৮) সতর্ক করে বলেন, যদি আমরা বন্যপ্রাণী এবং মানুষের মধ্যে গবাদিপশু নিয়ে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে উভয়পক্ষই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
কেনিয়ার পর্যটন, ঐতিহ্য ও বন্যপ্রাণী মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের এক খসড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, শান্তা আবাকের যাজক সম্প্রদায় এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনার জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনছে। খরা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা পানি, চারণভূমির অভাব এবং বন্যপ্রাণীর আক্রমণে তাদের গবাদিপশু হারাচ্ছে। আবার বন্যপ্রাণীর শিকার হ্রাস, পানির অভাব, অবরুদ্ধ অভিবাসন করিডোর, বন উজাড় এবং চোরাচালানের কারণে তাদের আবাসস্থল হারানো ও খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
কেনিয়ার ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন ছাতা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ডিকসন কাইলো বলেন, মানুষ-বন্যপ্রাণীর লড়াই বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে গবাদিপশুর চারণ স্থান, কৃষি ও মানব বসতিতে রূপান্তরের ফলাফল।
সংস্থাটির এক রিপোর্ট অনুসারে, কেনিয়া গত তিন দশকে প্রায় ৭০ শতাংশ বন্যপ্রাণী হারিয়েছে। ২০২২ সালের খরা রিপোর্টে তারা আরও জানায়, গত বছরে কয়েক মাসের মধ্যে সংরক্ষণে থাকা ১০০০টিরও বেশি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘটেছে।
সংরক্ষণবিদরা বলছেন, কেনিয়া উত্তর এবং উত্তর-পূর্বে বন্যপ্রাণী এলাকাগুলোতে কর্তৃপক্ষের তেমন নজর নেই। কারণ অঞ্চলগুলো পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত নয়। ২০২১ সালে দেশটির প্রথম বন্যপ্রাণী শুমারি অনুসারে, শুষ্ক এসব অঞ্চলে ভূমিতে বন্যপ্রাণী দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগের বেশি। যার মধ্যে হিরোলা অ্যান্টিলোপ, সোমালি জিরাফ এবং গ্রেভির জেব্রার মতো বিপন্ন প্রজাতিও রয়েছে। শান্ত-আবাকের স্থানীয় প্রশাসক মোহামুদ বলেছেন জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণীদের কাছে গবাদি পশু হারানোর অনেক অভিযোগ আসে আমাদের কাছে।
বাসিন্দারা কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের (কেডব্লিওএস) কাছে এর ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে। যদিও এটি অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কারণ বন্যপ্রাণী হামলায় শান্তা-আবাকের গবাদিপশু ক্ষতিপূরণের একটি মামলাও এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। ৫.৭ বিলিয়ন কেনিয়ান শিলিংয়ের (৩৪ মিলিয়ন পাউন্ড) দাবি এখনো নিষ্পত্তি করেনি সংস্থাটি। যা অনেক লোককে হতাশ করেছে।
স্থানীয় বন্যপ্রাণী কর্মীরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুতালে, শান্তা-আবাক এবং আশপাশের এলাকায় গোপনে বন্যপ্রাণী শিকারের ঘটনা বেড়েছে। কারণ কেনিয়ার বেশিরভাগ বন্যপ্রাণী সরকার-সুরক্ষিত এলাকার বাইরে বাস করে। শান্তা আবাকের স্কাউট সদস্যরা (বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণে সহায়তা করে ও নির্বিচারে যারা গাছ কাটে তাদের দিকে নজর রাখে) বলছে, কেনিয়ায় খরার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের লোকেরা বিক্রি করা ও সংরক্ষণের জন্য পশু হত্যা শুরু করেছে। কারণ গবাদি পশুর মৃত্যুর কারণে গরু, ছাগল ও উটের মাংস ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে এবং কম পাওয়া যাচ্ছে। এখানে জিরাফ বা উটের মাংসের জন্য একটি বাজার রয়েছে। যেখানে কম দামে মাংস বিক্রি হয়।