আত্মরক্ষায় পিস্তল-বন্দুক নিয়ে পাহারায় খার্তুম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩, ১০:৫১ পিএম

সাত যুবক। প্রতি রাতেই দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছে পূর্ব খার্তুমের আশপাশের এলাকা। পরনে ঢিলেঢালা পোশাক। তার ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছে বন্দুক। কারো পকেটে পিস্তল। রাতেই শুধু নয়, আত্মরক্ষায় দিনের বেলায়ও এমন পিস্তল-বন্দুক নিয়ে ঘুরছে এই সাত যুবক।
এই দলের মতো এমন আরও কয়েকটি দল আছে এখন খার্তুমে। দুই জেনারেলের লড়াইয়ে ফাঁকা হয়ে যাওয়া খার্তুমে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীদের হাত থেকে নিজেদের, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে যুদ্ধপীড়িত খার্তুমের যুবকরা। দ্য গার্ডিয়ান।
মোহাম্মদ আদম নামে সাবেক এক ছাত্র তার বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম এই উদ্যোগ নেন। নিজেদের এবং প্রতিবেশীদের আত্মরক্ষার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেন।
আদম বলেন, ‘আমাদের তৎপরতার কারণে এই অঞ্চলে চুরির ঘটনা কমিয়ে আনতে পেরেছি।’ আরেক বাসিন্দা আল-হাজও তাদের এলাকায় আদমদের মতোই ‘পাহারা কমিটি’ গঠন করেছেন। তার মতে, ‘ওরদুরমানের কিছু এলাকায় একা চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আপনাদের সেখানে একদল লোক নিয়ে চলতেই হবে। দলে অন্তত একজনের কাছে বন্দুক থাকা আবশ্যক। কেননা চোরেরাও এখন সশস্ত্র।’
ক্ষমতার আগ্রাসনে টানা ১৯ দিনের অস্থিরতায় অস্ত্র ডাকাতি বেড়েছে খার্তুমে। সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দ্বন্দ্বের বলি হয়েছে কয়েক হাজার সেনা। তাদের মরদেহের পাশে পড়ে থাকা পিস্তল-বন্দুক কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এছাড়াও সুদানের বন্দুকের বাজারগুলোও এখন উন্মুক্ত। বিশেষ করে নিম্নবিত্তরা। উচ্চবিত্ত বা একটু টাকা-পয়সাওয়ালা মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তরা সবাই খার্তুম ছেড়ে গেছে আর আগেই। পড়ে আছে শুধু স্থানীয় দিনমজুররা-খার্তুম ছাড়ার গাড়ি ভাড়াটাও নেই যাদের পকেটে! এই শ্রেণিরই একদল এখন লুটেপুটে খাচ্ছে খার্তুমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বন্ধ দোকানের তালা ভেঙে লুটে নিচ্ছে সব মালামাল। ছিনতাই করছে। আটকা পড়া ভিনদেশিদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে ছিনিয়ে নিচ্ছে শেষ সম্বল। আরএসএফের কারাগারে হামলার পর খার্তুমের দোষী সাব্যস্ত সব আসামি এমনকি খুনের আসামিও জেল থেকে পালিয়েছে। ছিনতাই-লুটপাট চক্রের দলভারী করেছে তারাও।
খার্তুম এবং এর পাশের শহর ওমদুমরানের পুরো বাজার, কারখানা এবং ব্যাংকগুলোতে লুটের ঘটনা ঘটছে বেশি। টিভি, ফ্রিজ, খাবারসহ যাবতীয় জিনিসপত্র রাজধানীর সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
ঘটনার বর্ণনায় ওমদুমরানের বাসিন্দা হানান খামিস বলেন, ‘শুধু মূল্যবান জিনিসপত্রই চুরি হচ্ছে না, অনেকে রাস্তায় নিহত সৈন্যদের কাছ থেকে বন্দুকও পেয়েছে। সেগুলো রয়েছে বিক্রির তালিকায়।’