ম্যাক্রোঁ কি ‘স্বাধীন’ ইউরোপের ডাক দিলেন?
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১২ এএম
কয়েকদিন ধরেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
চীন সফর শেষে দেশে ফেরার সময় তিনি দু-দুটি সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বদলে ইউরোপের ‘কৌশলগত সার্বভৌমত্ব’-এর ওপর জোর দিয়েছেন। তাইওয়ান প্রশ্নে ইউরোপের নরম অবস্থানেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এক ভাষণে ইউরোপের ভবিষ্যতের সেই একই রূপরেখা তুলে ধরেন ম্যাক্রোঁ।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নিজস্ব পরিচয় বজায় রাখতে হলে ইউরোপকে বাইরের জগতের ওপর নির্ভরতা কমাতেই হবে। অর্থাৎ নিজস্ব স্বার্থ অনুযায়ী সহযোগী বাছাই এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদেরই বেছে নেওয়ার পথে এগোতে হবে ।
ম্যাক্রোঁর মতে, শুধু বর্তমান বিশ্বের নাটকীয় বিবর্তনের সাক্ষী হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। একমাত্র খোলা মনে সহযোগিতার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যেভাবে চীন, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কের নতুন রসায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক ।
বিশেষ করে চীনের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়ে তিনি প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাশাপাশি ইউরোপকে তৃতীয় পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নও আলোড়ন সৃষ্টি করছে।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা ইউরোপের নিরাপত্তার ‘দৃঢ় ভিত্তি’। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশেও ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের সমালোচনা শোনা গেছে।
এদিনের ভাষণে ম্যাক্রোঁ ইউরোপের আরও শক্তিশালী শিল্প নীতির প্রস্তাব দিয়েছেন। ইউরোপেই উৎপাদন বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের ওপর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ম্যাক্রোঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সেই পথেই চলেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপ জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা যেভাবে প্রায় মুক্ত হতে পেরেছে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেই পথে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
তার মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ সম্ভবত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের সূত্রপাত ঘটিয়েছে। ভাষণের মাঝেই প্রতিবাদের মুখে পড়েন ম্যাক্রোঁ। বিক্ষোভকারীরা ব্যানার হাতে চিৎকার করে প্রশ্ন তোলেন, ‘ফরাসি গণতন্ত্র কোথায়?
’উল্লেখ্য, অবসর ভাতা কাঠামোর সংস্কারকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে সম্প্রতি প্রবল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মাক্রোঁ। দ্য হেগ শহরে ভাষণের সময়েও তাকে ‘হিংসা ও দ্বিচারিতার প্রেসিডেন্ট’ হিসাবে সমালোচনা শুনতে হয়েছে।