ইরাকে ৫০ বছরে ১০ লাখ গুম। ছবি: জাতিসংঘ ওয়েবসাইট
ইরাকে গত ৫০ বছরে ১০ লাখ মানুষ গুম হয়েছে। যার সিংহভাগের সঙ্গেই জড়িত সে দেশের সরকারি বাহিনী। মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সস কমিটির (সিইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এখনো এই ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত আইন প্রবর্তনের আহ্বানও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। তদন্ত কমিটির মন্তব্য, এ দেশটিতে অবিলম্বে আঞ্চলিক প্রতিবেশী ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ দরকার। এএফপি।
সিইডি (স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সংগঠন, যা কোনো দেশের গুমের বিরুদ্ধে ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের কনভেনশনের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করে) ২০২২ সালের নভেম্বরে তাদের ইরাক সফরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে। সেখানে বলা হয়েছে, সরকারি হিসাবমতেই ১৯৬৮ সাল থেকে গুম হওয়া ইরাকিদের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে প্রায় ১০ লাখ পর্যন্ত। প্রতিনিধি দলে থাকা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইরাক পরিদর্শনকালে কমিটির সদস্যরা গুমের শিকার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনা শুনেছেন।
সেই সব হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। একজন ইরাকি মা বলেছেন, ‘আমার ছেলে তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সে যাওয়ার পরপরই আমি তাকে ফোন করেছিলাম। কারণ সে তার ভাইকে যে রুটিটি দিতে চেয়েছিল তা ভুলে ফেলে গিয়েছিল। আমার ছেলে বলেছিল সে একটি চেকপয়েন্টে আছে। ইউনিফর্ম পরা কিছু লোক তাকে তল্লাশি করছে। একটু পরই আমাকে ফোন করবে। আমার ছেলে আরও কখনো আমাকে ফোন করেনি। তারপর থেকে আমি তাকে সব জায়গায় খুঁজেছি। কিন্তু আর তার দেখা পাইনি। আমি এখনো আমার ছেলের ফোনের অপেক্ষায় আছি।’
স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আইএস ক্যম্পে নারীদের যৌন নির্যাতনের পর জš§ নেওয়া শিশুদের জোরপূর্বক গুম করেছে। প্রতিবেদনটিতে আরও তুলে ধরা হয়েছে, ইরাকের শত শত পরিবার তুর্কি, সিরিয়া বা ইরানের শিবিরে বন্দি সন্দেহে তাদের সন্ধান করছে। সরকারি হিসাব মতে, সংঘাত এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ফলে। সিইডির কমিটির সদস্যরা বলেছেন, ১৯৬৮ এবং ২০০৩ এর মধ্যে সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক ইরাকি কুর্দিস্তানে গণহত্যা অভিযানে ১ লাখ কুর্দিসহ প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল। ২০০৩ সালের ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ২ লাখ ইরাকিকে বন্দি করেছিল। যাদের মধ্যে ৯৬ হাজার একটি যুক্তরাষ্ট্র শাসিত কারাগারে আটক ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাকি সৈন্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অপহরণ এবং গণহত্যার আরও একটি সেশন। তখনও আইএসদের হাতে ইরাকের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তারা যখন বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য সামরিক অভিযান শুরু করে, তখন সরকারপন্থি বাহিনীও হাজার হাজার সুন্নি আরবদের বিশেষ করে পুরুষ এবং ছেলেদের গুম করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২০ সালেও যখন ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের কারণে মানুষ প্রতিবাদ করে সে সময়েও বেশকিছু মানুষ গুম হয়। কমিটি বলেছে, ইরাকি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে একটি স্বাধীন টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠা করে সব বন্দিদের নাম নিবন্ধিত করতে হবে। আÍীয়দের তাদের অবস্থান সম্পর্কে যথাযথভাবে অবহিত করা করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে ক্রমাগত আটকের অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ করতে হবে।