ইতোমধ্যে শত শত রোগীতে ঠাসা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর বীর হাসপাতাল। তবুও হুইলচেয়ার অথবা স্ট্রেচারে প্রতিদিন আসছে নতুন নতুন রোগী। ফলে পুরাতন রোগীকে বিছানা থেকে তুলে অথবা অন্যকারও মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে নতুনদের। রোগীর ভিড় ঠেকাতে নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকে কড়া পাহারা বসিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরাও। শুধু চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটই নয়, রোগীর এই বাড়তি চাপ সামলাতে প্রয়োজন অতিরিক্ত নার্সেরও।
কিন্তু নেপালের বাস্তবচিত্র পুরোপুরি উল্টো। ছয়জন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকার কথা থাকলেও সেখানে ২০ থেকে ৩০ জন রোগীর জন্য রয়েছে একজন নার্স।
এতকিছুর পরও দেশটিতে নতুন উপদ্রব হয়ে দেখা দিয়েছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) উচ্চ বেতনের হাতছানি। প্রলোভনের এই ব্রিটিশ ‘বাতাস’ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে নেপালে। দেশের ভাঙা স্বাস্থ্য খাতের মায়া ছেড়ে উচ্চাভিলাসী জীবনের টানে নেপালের নার্সরা ছুটছেন লন্ডনে। গার্ডিয়ান।
শুধু নার্স সংকটই নয়, নেপালের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেশিরভাগ বৈশিষ্ট্য জনাকীর্ণ ওয়ার্ড, চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, অনুন্নত অবকাঠামো আর কর্মীদের কম বেতন। ব্যাপক দুরবস্থার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লাল তালিকায় থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য ও নেপাল সরকারের গত বছর এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের সার্বজনিন অর্থায়িত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে দরিদ্র দেশ থেকে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের নিয়োগ দেওয়া হবে। থাকবে উচ্চ বেতনের সুবিধা।
ইতোমধ্যে নেপালের অনেক নার্সই দেশ ছেড়েছেন এই হাতছানিতে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ‘এনএইচএস চুক্তি দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার কর্মী সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়া সরকারি ও গ্রামীণ হাসপাতালগুলো বিপদের মুখে পড়বে।’
কাঠমান্ডুর বীর হাসপাতালের এক নার্স মনীষা নাথ বলেন, ‘আমরা গেলে দেশকে ভুগতে হবে কিন্তু থেকে গেলে নিজেদের কষ্ট পেতে হবে।’
ল্যানসেটের এক সমীক্ষা বলছে, নেপালে ১০ হাজার জন নার্স এবং আয়া রয়েছে আনুমানিক ২৮ জন। আর যুক্তরাজ্যে তার সংখ্যা ১৩১ জন।
ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড সোস্যাল কেয়ারের (ডিএইচএসসি) একজন মুখপাত্র বলেন, এটি নেপালের নার্সদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের সুযোগ দিয়ে অর্থনৈতিক ও পেশাগতভাবে উন্নত করবে। এছাড়া দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা আবার নিজ দেশেও ফিরে যেতে পারে। উল্লেখ্য, সোমবার যুক্তরাজ্যেই অপর্যাপ্ত বেতন ও চাকরির ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিবেশের জন্য বড় ধরনের বিক্ষোভে নামেন দেশটির জুনিয়র চিকিৎসকরা।