ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব দিন দিন বেড়ে চলছে। এতে খানিকটা বিব্রত পশ্চিমারা। সে ভয়েই চীনকে ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা এঁটেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া।
এবার পারমাণবিক চালিত সাবমেরিনের একটি নতুন যৌথ বহর তৈরি করবে বলে ঘোষণা দেন তারা। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়োগোর নৌঘাঁটিতে এর বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হয়।
সে সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ। ‘অকাস’ (অস্ট্রেলিয়া, ইউকে, ইউএস) চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মত কমপক্ষে তিনটি পারমাণবিক শক্তি চালিত সাব-সফর দেখতে পাবে বলে নিশ্চত করা হয়।
সান দিয়েগোতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, চুক্তিটি পারমাণবিক মুক্ত দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিশ্রুতিকে নষ্ট করবে না।’ আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়ান শিপইয়ার্ডে সাবমেরিন নির্মাণের ফলে স্থানীয় হাজার হাজার কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।
হাত গুটিয়ে বসে নেই নেই বেইজিংও। কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে , ‘বড় নৌ চুক্তি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। এছাড়া চীনের জাতিসংঘ মিশনও পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক সম্প্র্রসারণ প্রচেষ্টা বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছে।
তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তা নাকচ করে বলেন, ‘এই চুক্তির লক্ষ্য এই অঞ্চলে কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। সাবমেরিনগুলো শুধুমাত্র পারমাণবিক শক্তি চালিত, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত নয়’।
বিবরণিতে বলা হয়েছে, মিত্ররা যুক্তরাজ্যের তৈরি রোলস-রয়েস চুলিসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি নতুন বহর তৈরিতে কাজ করবে। যুক্তরাজ্যের পর ওয়াশিংটনের অভিজাত পারমাণবিক প্রযুক্তি গ্রহণকারী দ্বিতীয় দেশ হবে অস্ট্রেলিয়া। নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বিশ্বে সপ্তম। সাবমেরিনগুলো বিদ্যমান ডিজেল-ইঞ্জিন বহরের চেয়ে অত্যাধিক দ্রততার সাথে কাজ করতে সক্ষম হবে।
অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো শত্রুদের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা চালাতে পারবে। চুক্তির অধীনে, পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন কীভাবে ব্যবহার খেখাতে অস্ট্রেলিয়ার নৌ সেনাদের এবছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাবমেরিন ঘাঁটিতে পাঠানো হবে।
২০২৭ থেকে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অল্প সংখ্যক পারমাণবিক সাবমেরিন স্থাপন করবে। ২০৩০সালের মধ্যে ক্যানবেরায় তিনটি ইউএস-মডেলের ভার্জিনিয়া শ্রেণীর সাবমেরিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও আরো দুইটি সাবমেরিন ক্রয়ের সুযোগ পাবে অস্ট্রেলিয়া। সোমবারের ঘোষণা অনুযায়ী, ডুবোজাহাজ তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে আগামী কয়েক বছর ধরে ৪৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ভার্জিনিয়া ক্লাস সাবমেরিন উন্নতিতে বিশেষ গুরত্ব দেয়া হবে।
পরিকল্পনায় যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইন ও অত্যাধুসিক প্রযুক্তির পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন এসএসএন-অকাস নির্মাণ করা হবে। এই অ্যাটাক ক্রাফট তিনটি দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ ডিজাইনে তৈরি করা হবে।
২০২১ সালে এ অঞ্চলে একটি বিশেষ কৌশলগত নিরাপত্তা চুক্তি হিসেবে ‘অকাস’ চুক্তি ঘোষণা করা হয়। চুক্তির অধীনে সাবমেরিন ক্রয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
মূলত দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তার করছিল। সমুদ্রসীমায় দেশটির ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও এই অঞ্চলের দেশগুলোর। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশই নিজেদের বলে দাবি করে চীন।
ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তাদের দাবি তুলতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের প্রায়ই উত্তেজনা দেখা যায়।