থাইল্যান্ডে বায়ুদূষণে ২ লাখ মানুষ হাসপাতালে, অসুস্থ ১৩ লাখ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ১০:৪০ পিএম
বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে থাইল্যান্ডে। শুধু গত সপ্তাহেই বায়ুদূষণজনিত শ্বাসকষ্টে প্রায় দুই লাখ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে ব্যাংককে। খবর ব্যাংকক পোস্টের।
শনিবার থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের ফলে বছরের শুরুতে দেশের ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ মানুষ শুধু গত সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী ব্যাংককে অন্তত এক কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস করেন। বিশ্বের অন্যতম পর্যটন শহর। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং খড়সহ কৃষিভিত্তিক নানা জিনিস পোড়ানোর জেরে সৃষ্ট ধোঁয়ার অপ্রীতিকর হলুদ-ধূসর বায়ুতে শহরটি আচ্ছন্ন রয়েছে।
এছাড়া উত্তরের শহর চিয়াং মাইতেও বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেশি। এটি একটি কৃষি অঞ্চল এবং এখানে কৃষকরা এই সময়ে ফসলের খড় পোড়ান। আইকিউএয়ার পর্যবেক্ষণ সংস্থার র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংকক। থাই জনস্বাস্থ্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসক ক্রিয়াংক্রাই নামথাইসোং গত বুধবার (৮ মার্চ) শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সেসময় তিনি জানান, যারাই ঘরের বাইরে যাবেন তাদের উচিত দূষণবিরোধী উচ্চমানের এন-৯৫ মাস্ক পরা। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে এবং ফেব্রুয়ারির শুরুতে ব্যাংককে বায়ুদূষণ চরমে পৌঁছায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সেসময় শহর কর্তৃপক্ষ লোকদের বাড়ি থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিল।
গত বছর শহরের পরিবেশ উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংককের গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন চ্যাডচার্ট সিট্টিপুন্ট। তবে শহরের বায়ু পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি এবং গভর্নর সিট্টিপুন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চলমান পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে তারা আবারও অনুরূপ আরেকটি আদেশ জারি করতে দ্বিধা করবেন না। একভারুন্যু আম্রপালা নামের ওই মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর হয়ে উঠেছে সরকার ব্যাংকক প্রশাসন।
ইতোমধ্যেই শিশুদের জন্য ঘরে বাতাস বিশুদ্ধকারক লাগানো হয়েছে। শহরের নার্সারি স্কুলগুলোতে ছোট বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্যও এয়ার পিউরিফায়ারসহ বিশেষ ‘নো ডাস্ট রুম’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি চেকপয়েন্টে গাড়ির দূষণমাত্রা মাপা এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনেও নেওয়া হচ্ছে একাধিক পদক্ষেপ। থাই সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের তথ্যানুসারে, গত তিন দিন ধরে ব্যাংককের বেশিরভাগ এলাকায় পিএম-২.৫ এর মাত্রা নিরাপদ সীমার ওপরে রয়েছে। উল্লেখ্য, বস্তুকণা পিএম-২.৫ হলো বাতাসে থাকা সব ধরনের কঠিন এবং তরল কণার সমষ্টি, যার বেশিরভাগই বিপজ্জনক। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন প্রাণঘাতী ক্যানসার এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫। এছাড়া বায়ুদূষণকারী এনও২ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প স্থাপনা, আবাসিক এলাকায় রান্না, তাপপ্রবাহ এবং জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।
ডব্লিউএইচও-এর মতে, বায়ুদূষণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি রোগ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়।