রমজানে চরম দুর্ভোগে পড়বে পাকিস্তান
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৬ পিএম
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ‘দেউলিয়া’ পাকিস্তানে এবারের রমজানে চরম দুর্ভোগ পড়বে মানুষ। সোমবার দেশটির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ডনের এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি বছর পাকিস্তানে রমজান অবশ্যই অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য আগের বছরের তুলনায় কঠিন হবে। বিশেষ করে গত বছরের তুলনায় এবার পণ্যদ্রব্যের আকাশছোঁয়া দামের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হবে।
দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় রোজা রাখার পর অনেক আইটেম সাজিয়ে মজাদার ইফতার করেন রোজাদাররা। কিন্তু লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের কারণে মাঝারি বেতন পান এমন অনেকে এবার তাদের কেনাকাটা সীমিত করতে বাধ্য হবেন। পবিত্র এই মাসে সুলভমূল্যে ভোগ্যপণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু তার কিছুই করছে না শাহবাজ সরকার। উল্টো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে সুদের হার ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৯ শতাংশ করেছে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুদের হার। এর আগে ১৯৯৬ সালে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পাকিস্তান ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিল পেতে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়েছে, যা ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বেলআউট প্যাকেজের অংশ। এনডিটিভি, ডন, ভয়েস অব আমেরিকা।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেশের সংকটাপন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে আইএমএফের কঠোর শর্ত গ্রহণে বাধ্য হচ্ছে পাকিস্তান। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে সম্প্রতি অনেক পণ্যের ওপর সাধারণ বিক্রয়কর (জিএসটি) ১৭ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। ফলের রসের ওপর বাড়িয়েছে ১০ শতাংশ ফেডারেল আবগারি শুল্ক। এতে করে ঘি বা রান্নার তেল এবং প্যাকেটজাত জুসগুলো সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যের তুলনা করলে দেখা যা এই সময়ের মধ্যে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ২০ কেজি আটার ব্যাগের মূল্য সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ওজনের প্রতিটি আটার ব্যাগের দাম ৮০০-১৫০০ রুপি থেকে বেড়ে ১২৯৫-২৭২০ রুপিতে পৌঁছেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একজন স্ত্রী এবং দুই থেকে তিন সন্তান নিয়ে মাসিক ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার রুপি উপার্জনকারী একজন ব্যক্তি কীভাবে ইফতারি ও সেহরির ব্যবস্থা করবেন? এক লিটার দুধ, ফল, বেসিন, দই, ঘি এবং মিষ্টান্ন আইটেমের দৈনিক খরচ ধরে নিলে প্রতিদিন আনুমানিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার রুপির প্রয়োজন হয়। যদিও এই হিসাবটিতে ছোলা, জুস, কোল্ড ড্রিংকস এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
করাচি রিটেইল গ্রোসারস গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ কুরেশি বলেছেন, আমি পবিত্র রমজান মাসে দাতব্য বিতরণের জন্য দুই ধরনের রেশন প্যাক তৈরি করছি। একটি ব্যাগের দাম ৪ হাজার রুপি। এতে আটা, চিনি, চাল, ডাল, চা, লবণ, তেল এবং ঘি, ছোলা ও ভার্মিসেলি রয়েছে।
অন্য রেশন ব্যাগের দাম ৬ হাজার রুপি এবং এতে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত রমজানে আমরা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম দামে এই পণ্যগুলো বিতরণ করতে পেরেছিলাম। এ বছর আমরা রেশন প্যাকে চাল যোগ করতে পারিনি। কারণ ভালো মানের বাসমতি চাল এখন প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ রুপি, যা গত বছর প্রতি কেজি ১৫০-৩০০ রুপি ছিল।
দ্য ডন বলছে, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির এই তীব্রতা অনেক নিম্ন আয়ের মানুষকে কল্যাণ সংস্থার বিনামূল্যে ইফতারি ও সেহরির আয়োজনের দীর্ঘ লাইনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে কোনো মধ্যবিত্ত ব্যক্তির পক্ষে তার আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়া এবং ইফতার সীমিত করার বিকল্পটি বেছে নেওয়া কঠিন হতে পারে।