যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্যের বদলে বহু মেরুর শাসন চায় চীন-রাশিয়া
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই পৃথিবী শাসনে একাধিপত্য বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই একাধিপত্যকে পেছনে ফেলে এবার বহু মেরুর শাসন চাইছে চীন-রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেন চীনের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিশন অফিসের পরিচালক ওয়াং ইয়ে। বুধবার রাশিয়ার মস্কোতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে পুতিন বলেন, একটি নতুন মাইফলক তৈরি করতে যাচ্ছে মস্কো ও বেইজিং সম্পর্ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়া-চীনের সম্পর্ক বিকশিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পুতিনের অভিমত, বর্তমানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো জটিল সময় পার করছে এবং বেশ উদ্বেগ-শঙ্কায় তারা দিন কাটাচ্ছে। বাণিজ্য সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে পুতিন বলেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতা বজায় রাখা জরুরি। মস্কোতে ওয়াং ইয়ের এই ভ্রমণে কড়া নজর রাখছে পশ্চিমা দেশগুলো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিকে নতুন দিকে মোড় দেবে চীন-রাশিয়ার এই সম্পর্ক। তবে প্রথম থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীন নিরপেক্ষতার দাবি জানিয়ে আসছে চীন।
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুই দেশের উত্তরোত্তর সম্পর্ক বৃদ্ধির এই প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভেরভকে বলেন, রাশিয়া ও চীন বহু মেরুর বিশ্বের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছানোর কথাও জানান তিনি।
রাশিয়াকে সরাসরি সমর্থনের কথা ভাবছে চীন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ময়দানে কয়েকদিন ধরেই এই ধোঁয়া তুলছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেনের এক বক্তৃতায় এ খবর চাউর হতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইউক্রেন ও তার পশ্চিমামিত্রসহ তাবড় তাবড় সব সমর বিশারদ।
বলছেন, চীনের এই সমর্থন ইউক্রেন-রাশিয়ার এক বছরের যুদ্ধের মোড় পালটে দেবে। তবে রাশিয়াকে সমর্থনের দাবি অস্বীকার করেছে চীন। তবে বেশ কিছু কারণে দাবির কিছুটা যৌক্তিকতা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর পেছনে নয়, এবার সামনে থেকেই রাশিয়াকে সমর্থন দেবে চীন-ব্লিঙ্কেনের এই উদ্বেগের সমর্থন জানিয়েছেন সিডনির লুই ইনস্টিটিউটের পূর্ব এশিয়ার সিনিয়র ফেলো রিচার্ড মেকগ্রেগোরও।
অস্ট্রেলিয়ার কৌশলবিদ ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএফপিকে জানান, রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন যদি অস্ত্র সরবরাহ করে তাহলে যুদ্ধের মোড় পালটে যাবে। চীনের অস্ত্র পাঠানোর দাবি অস্বীকার করে চীনা সামরিক ভাষ্যকার সং ঝং পিংও জানান, যুদ্ধের আগেই মস্কো ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক সহায়তা গভীর ছিল এবং তা অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার একদল বিশেষজ্ঞ বলেন, রাশিয়ার অস্ত্র চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত পারমাণবিক
মজুত সরবরাহ বন্ধের ঝুঁকি থাকলেও পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ায় না। পুতিনের এই ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি বন্ধের ঘোষণা পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর চাপসৃষ্টির আরেকটি প্রচেষ্টার অংশ বলে উল্লেখ করেন তারা। বিশেষজ্ঞরা জানান, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সাহায্য করছে বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তিতে মস্কোর অংশগ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নোবলে বিজয়ী আইসিএন-এর প্রধান ক্রেমলিনের কাছ থেকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার গোপন হুমকিতে শঙ্কা পকাশ করেছেন। পরমাণু অস্ত্র বাতিলের প্রচারাভিযানের পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পারমাণবিক হামলার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইসিএএন-এর অন্তর্বর্তী নির্বাহী পরিচালক ড্যানিয়েল হগস্টা শুক্রবার জাতিসংঘ প্রতিনিধি অ্যাসোসিয়েশনে এ কথা বলেন।