পর্বতের চূড়ায় জ্বলছে ঐতিহ্যের শেষ প্রদীপ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:০৫ পিএম
উষ্ণ উলের টুপি-লেবাননের হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। স্থানীয়রা বলেন লাব্বাদাহ। দেশটির প্রাচীন এ শিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। পুরুষানুক্রমে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী ‘ভেড়ার পশমের টুপি’ শেষ প্রদীপের মতো কোনোরকমে বাঁচিয়ে রেখেছেন মাত্র একজন কারিগর।
ইউসুফ আকিকি (৬০)। লেবাননের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল থেকে ১২০০ মিটার (৪০০০ ফুট) পর্বতের ওপর বরফে ঢাকা একটি গ্রামে বাস করেন। গ্রামটিতে লাব্বাদাহের শেষ নির্মাতাও তিনি।
আকিকি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তিনি ভেড়ার পশম দিয়ে নির্মিত লেবাননের ঐতিহ্যবাহী টুপির শেষ বাণিজ্যিক নির্মাতা হতে পারেন। আকিকি মনে করেন, রাষ্ট্রের উচিত আমাদের বাজার এবং প্রদর্শনীর জায়গার নিশ্চয়তা দেওয়া।
কারণ সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননকে আঁকড়ে ধরা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে টুপি থেকে প্রাপ্ত আয় টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। যার কারণে আকিকিকে টুপি তৈরির পাশাপাশি কৃষিকাজও করতে হয়। জাতিসংঘের মতে, লেবাননে দারিদ্র্যের হার জনসংখ্যার ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।
আরবি শব্দ ল্যাবড থেকে এসেছে লাব্বাদাহ। অফহোয়াইট, ধূসর, বাদামি বা কালো রঙের জলরোধী এবং উষ্ণ টুপি। এটির ডিজাইন প্রাচীন ফিনিশীয় সভ্যতার সময়ের টুপিগুলোর মধ্যে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন আকিকি।
যদিও ফিনিশীয়দের নির্মাণশৈলী আরও দীর্ঘায়িত ছিল। গ্রামের প্রবীণরা তাদের নিজস্ব লাব্বাদেহ তৈরি করতেন।
টুপিটি তৈরি করার জন্য একটি সতর্ক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। ভেড়ার পশম রোদে শুকানোর পর পানি এবং আলেপ্পো সাবান দিয়ে ঢালাই করা হয়। যার মধ্যে থাকে জলপাই তেল ও লরেল পাতার নির্যাস। রসটি পশমকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে।
এ জন্য পরবর্তীকালে ময়দার মতো নমনীয় হয়ে ওঠে।
আকিকি বলেন, এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া। যার কারণে তিনি সারাদিনে সর্বোচ্চ তিনটি লাব্বাদেহ তৈরি করতে পারেন। ক্রেতাদের উৎসাহিত করতে, আকিকি টুপির আরও আধুনিক ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন। এ ছাড়া এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তার ভাগ্নেদের।