ইরান কি তাহলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:০৫ পিএম
মধ্য ইরানে অবস্থিত দেশটির নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজ। ছবি: সংগৃহীত
আগেও অনেকবার খবর বেরিয়েছিল যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে। এমনকি দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলেও সংবাদ প্রচার হয়। যদিও তেহরান এ ধরনের খবরকে গুজব এবং পশ্চিমা মিডিয়ার সৃষ্ট গল্প বলে অভিহিত করেছে।
কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে তার দেশকে ইরানের সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায়ের করা পরমাণু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। তেহরান যখন প্রকাশ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার ঘোষণা দেয়, তখন দেশটির এ ঘোষণাকে আর শুধু ঘোষণা হিসেবেই গ্রহণ করেনি তার প্রতিপক্ষ। কারণ ততদিনে জল অনেকদূর গড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান তার সামরিক শিল্পে যে পরিমাণ উন্নতি সাধন করেছে, তাতে রীতিমতো চমকে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। বিশেষ করে, ইরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরাইল আতঙ্কে আছে বলেই মনে করা হয়। মাঝেমধ্যেই ইরানের বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ কিংবা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরাইল। তার জবাবও দেয় তেহরান। যেটা এক সময় দেশটির জন্য কঠিন ছিল। এ বিষয়ে ইরানের কর্মকর্তারা বলে থাকেন, তাদের ক্ষতি করার জবাব ইসরাইল কোথায় পায়, সেটা তারাই ভালো বোঝে।
তাদের এই দাবি পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবর থেকেই বোঝা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব সাগর, পারস্য উপসাগরে ইসরাইলি মালিকানাধীন জাহাজ ও ট্যাঙ্কারে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার পেছনে ইরানকে দায়ী করা হয়।
সিরিয়ায় ইসরাইলি সীমান্তে, এমনকি দেশটির ভেতরেও হামলার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করা হয়। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি আরব সাগরে ইসরাইলি মালিকানাধীন জাহাজে হামলা হয়েছে। এর পেছনে ইরানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক, লেবাননসহ আরও কিছু অঞ্চলে ইরানের প্রক্সি বাহিনীর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি পশ্চিমা জোট। এর মূলে রয়েছে স্বল্প মূল্যের অথচ কার্যকর ইরানি রকেট, ড্রোন ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র। সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকেও ড্রোন সরবরাহ করছে তেহরান। যদিও মস্কো কিংবা তেহরান সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
এই তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো- ১০-১৫ বছর আগের ইরান এবং বর্তমানের ইরানের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ রোববারের এক প্রতিবেদনে বলেছে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা তথা আইএইএ’র কর্মকর্তারা দেখতে পেয়েছেন যে, ইরান ইতোমধ্যে ৮৪ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। আর পারমাণবিক বোমা বানাতে প্রয়োজন ৯০ শতাংশ ইউরেনিয়াম। তেহরান নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই এত পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
তবে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। দেশটি শুরু থেকেই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর আগে ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য এবং উল্লিখিত সংস্থাটির চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেটি দেখাশুনা করবে আইএইএ। এর পর থেকে নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করে ইরান।
কিন্তু ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে গেলে কার্যত তা অচল হয়ে পড়ে। অন্য পক্ষগুলোও কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ইরান প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যে, তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে। পাশাপাশি আইএইএকেও নিয়মিত্র রিপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেয় তেহরান। অভিযোগ উঠে, অচলাবস্থার সুযোগ নিয়ে ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাগ্রহণের পর পরমাণু চুক্তি পুনরায় সচল করার উদ্যোগ নেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বেশ কয়েক দফা বৈঠকও হয়। কিন্তু উল্লেখ করার মতো কোনো ফলাফল আসেনি। বরং ইরানের বিরুদ্ধে এখন নানা অভিযোগ করছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ বৈঠকের পর কার্যত আর কোনো যোগাযোগ নেই বিষয়টি নিয়ে।
এমনই প্রেক্ষাপটে ব্লুমবার্গের মতো প্রভাবশালী মিডিয়ার রোববারের প্রতিবেদন ঘিরে আবারও জল্পনা শুরু হয়েছে যে, তাহলে ইরান কি সত্যিই পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে?
তবে এমন জল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান বেহরুজ কামালভান্দি। দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজকে তিনি রোববার বলেছেন, পর্যবেক্ষকরা (ইন্সপেক্টর) ৬০ শতাংশের বেশি দেখিয়েছেন। কিন্তু ইরান ৬০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছে না।
তিনি বলেন, ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। এটা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।