নিউজিল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন দলটির এমপি ক্রিস হিপকিন্স।
ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির ৬৬ এমপির নেতৃত্বের জন্য একমাত্র মনোনীত প্রার্থী ৪৪ বছর বয়সি এই জনপ্রতিনিধি। খবর রয়টার্সের।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো হিপকিন্স পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০২০ সালের নভেম্বরে তাকে কোভিড-১৯ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
‘নিজের কাছে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই’ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর ক্রিস হিপকিন্সের নেতৃত্বের বিষয়টি সামনে চলে আসে।
তবে হিপকিন্স কতদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন তা এখনো অনিশ্চিত। কেননা দেশটিতে আগামী অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে তিনি নিউজিল্যান্ডের পুলিশ, শিক্ষা ও সরকারি সেবাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রোববার লেবার পার্টির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে হিপকিন্সকে দেশের প্রতিনিধি পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নিতে হবে। জেসিন্ডা আরডার্ন আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে গভর্নর জেনারেলের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করবেন। এর পর রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষ থেকে ক্রিস হিপকিন্সকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তবে ২০২৩ সালের নির্বাচনের পর দেশটির শীর্ষ পদে থাকতে হলে লেবার পার্টির এই নেতাকে মুখোমুখি হতে হবে অনেক পরীক্ষার।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশটিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক অসমতার কারণে আরডার্নের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এদিকে ক্রিস হিপকিন্সের নিয়োগ দেশটির প্রথম মাওরি আদি জনগোষ্ঠী থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিচারমন্ত্রী কিরি এলানের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাকে ম্লান করে দিল।
অন্যদিকে জেসিন্ডা আরডার্নের পদত্যাগের ঘোষণায় পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বলছেন তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার আগে তিনি নিজেই সারে যাচ্ছেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে বিপুল জয়ের মধ্য দিয়ে জেসিন্ডা দ্বিতীয় মেয়াদে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। যদিও এবার তার জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা দেখা যায়।
এর অন্যতম কারণ— সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমতে থাকা, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ও রক্ষণশীল বিরোধীদের পুনরুত্থান। এসব বিষয় জেসিন্ডার ওপর চাপ তৈরি করছিল, যার আলামতও প্রকাশ পেয়েছিল।
এক সংবাদ সম্মেলনে আরডার্ন (৪২) চোখের পানি সংবরণ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা সাড়ে পাঁচ বছর কঠিন সময় ছিল। আমি কেবলই একজন মানুষ। আমার এখন সরে দাঁড়ানো দরকার।’
জেসিন্ডার পদত্যাগের পেছনে তার ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর আরডার্নের কন্যা নেভের স্কুলজীবন শুরু হবে। ওই সময় তিনি কন্যার পাশে থাকার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন, এখন নেভেকে এটি বলতে পারবেন এবং দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডকে ‘এখন তাদের বিয়ে করার সময় হয়েছে’ বলে জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
আরডার্ন জানিয়েছেন, কাজ কঠিন ছিল এর জন্য সরে দাঁড়াচ্ছেন না তিনি। বরং অন্যরা আরও ভালো করবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর জেসিন্ডাকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার মধ্যে ছিল নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, আগ্নেয়গিরির প্রাণঘাতী উদগিরণ ও করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন জেসিন্ডা। তিনি হয়ে ওঠেন প্রগতিশীল রাজনীতির বৈশ্বিক ‘মূর্ত প্রতীক’ বা ‘আইকন’।
আরডার্ন পদত্যাগের ঘোষণায় বলেন, দেশের নেতৃত্ব দেওয়া অব্যাহত রাখতে তিনি আর ‘সমর্থন চাইবেন না।’ ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পরবর্তী নির্বাচনেও আর প্রার্থী হবেন না।
আরও বলেন, আমি জানি এই সিদ্ধান্তের পর এর তথাকথিত ‘প্রকৃত’ কারণ কী ছিল তা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে; কিন্তু আপনারা যা পাবেন তা হলো বড় কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ছয় বছর পার করার পরও আমি মানুষ। রাজনীতিকরা মানুষ। আমরা যতটা পারি, যতদিন পারি, সবই দিই তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে। আর আমার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গেছে।