ভারত–ইরানকে নিয়ে যেভাবে নতুন বাণিজ্যপথ চালু করছে রাশিয়া
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২২, ০৫:১৩ এএম
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি বাঁচাতে কৃষ্ণসাগরের বিকল্প পুরনো একটি রুট সক্রিয় করার চেষ্টা করছে মস্কো। এতে এগিয়ে এসেছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় থাকা আরেক দেশ ইরান।
ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর (আইএনএসটিসি) নামে এ রুটটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে শুরু করে মস্কো, ইরানের তেহরান, ইস্পাহান হয়ে ভারতের মুম্বাই আসবে। এর দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এতে যুক্ত রয়েছে মহাসড়ক, রেলপথ ও সমুদ্রবন্দর।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই রুটকে বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে মস্কো। ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সেই স্বপ্নপূরণে অনেকটা সহায়ক হয়েছে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আলজাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারের খাদ্যশস্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। তাই কৃষ্ণসাগরের রুট বন্ধ রাখলেও বিকল্প হিসেবে পুরনো একটি রুট সক্রিয় করার চেষ্টা করছে মস্কো। ভারত-ইরানকে নিয়ে নতুন বাণিজ্যপথ চালুর উদ্যোগটি অনেক আগে থেকেই ছিল রাশিয়ার।
গত কয়েক দিন আগে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে তেহরানে হওয়া এক বৈঠকে জাহাজ চলাচলের নতুন রুট নিয়ে আলোচনা হয়।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক এশিয়া শিপিং মিডিয়া স্প্ল্যাশের খবরে বলা হয়, ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান শিপিং লাইন (আইআরআইএসএল) এই নেটওয়ার্ক তৈরিতে কাজ করছে। নতুন রুটে রুশ পণ্যবাহী জাহাজগুলো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর (আইএনএসটিসি) হয়ে ভারতে পৌঁছাতে পারবে।
করিডরটি ইতোমধ্যে পরিচালন পর্যায়ে আছে। গত মাসে ট্রায়াল পর্বে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে পণ্যবোঝাই একটি জাহাজ ভারতের নাভা শেভা বন্দরের দিকে যাত্রা করে।
জাহাজটি রাশিয়ার আস্ট্রাখান বন্দর থেকে কাস্পিয়ান সাগরের আনজালি এবং পারস্য উপসাগরে ইরানের বন্দর আব্বাস হয়ে চলতি মাসের শুরুতে ভারতে পৌঁছায়।
গত জুনে ইরান প্রথমবারের মতো একটি পাইলট প্রকল্প ঘোষণা করে। এর আওতায় আইএনএসটিসি রুট ধরে দেশটির বন্দর আব্বাস থেকে দুই কনটেইনার রাশিয়ার তৈরি পণ্য ভারতে পাঠায় ইরান। জুলাইয়ে এই রুট ধরে ভারতে আসে আরও ৩৯ কনটেইনার পণ্য।
ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েটের সাবেক পরামর্শক বৈশালি বসু শর্মা বলেন, এ বাণিজ্যপথে কনটেইনার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ আইএনএসটিসি রুট দিয়ে বছরে প্রায় আড়াই কোটি টন পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পণ্যের ৭৫ শতাংশ পরিবহণ করা হবে ইউরেশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও উপসাগরীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে।
বিশ্লেষকের অনেকের মতে, এই বাণিজ্যপথ দ্রুত সক্রিয় করা এখন রাশিয়া ও ভারতের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গুলশান সচদেব বলেন, রাশিয়ার বেশিরভাগ পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ইউরোপকেন্দ্রিক। তাই ইউক্রেন যুদ্ধে বড় ধাক্কা খেয়েছে মস্কো। অন্যদিকে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন ও পশ্চিমের দেশগুলোয় বাণিজ্য বিস্তারে আগ্রহী। তবে ইরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
তবে ভারতের সামনে এ ক্ষেত্রে এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে পশ্চিমা চাপ। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির পরিচালক ভেলিনা চাকারোভা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনই চাইবে না দিল্লি ও মস্কো এতটা কাছাকাছি আসুক। তবে দিল্লির ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারে পশ্চিমারা এবং এই চাপ দিল্লি কীভাবে সামাল দেয়-তার ওপর নির্ভর করবে এই বাণিজ্য পথের ভবিষ্যৎ।
আলজাজিরা জানিয়েছে, এই বাণিজ্যপথের বিশেষ কৌশলগত ও বাণিজ্যক গুরুত্বও রয়েছে। এই পথ ব্যবহার করে ভারত থেকে পশ্চিম ইউরোপে পণ্য পরিবহণের সময় ৪০-৬০ দিন থেকে কমে ২৫-৩০ দিনে নেমে আসবে। খরচ বাঁচবে প্রায় ৩০ শতাংশ।
এই রুট মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানকে যুক্ত করলেও পাকিস্তানকে এড়িয়ে গেছে, যা ভারতের জন্যও সুবিধাজনক। এ ছাড়া ইরানের চাবাহার বন্দর নির্মাণে ২০১৬ সালে ভারত বিনিয়োগ করেছে। দিল্লি চায়, আইএনএসটিসি রুটে চাবাহার যুক্ত হোক।