‘বলির পাঁঠা’ হয়েছেন তাবলিগ সদস্যরা: ভারতীয় আদালত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২০, ১২:০৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
করোনাকালে তাবলিগ জামাত সদস্যদের ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে মুম্বাই হাইকোর্ট। নিজামুদ্দিন মার্কাজে যারা গিয়েছিলো, তাদের নিয়ে বড় ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছিল বলেও মনে করে আদালত।
পর্যটন ভিসায় এসে ধর্মপ্রচার, করোনা সংক্রান্ত নিয়মবিধি লঙ্ঘনের মতো একাধিক অভিযোগে কয়েক মাস আগে ৪০টি দেশের ২ হাজার ৫৫০ তাবলিগ জামাত সদস্যকে কালো তালিকাভুক্ত করে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়।
২৯ জন বিদেশি তাবলিগ জামাত সদস্য এবং ৭ জন ভারতীয় সদস্যের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রে দায়ের হওয়া এফআইআর বাতিল করে শুক্রবার মুম্বাই হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, করোনাকালে তাদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছিল।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, নিজামুদ্দিন মার্কাজে যোগ দেওয়ায় ওই ২৯ জন বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে জাতীয় মহামারী, বিপর্যয় মোকাবেলা এবং বিদেশি নাগরিক আইনে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে মুম্বাই হাইকোর্টে একটি পিটিশন জমা পড়ে।
বিচারপতি এমডি সেওলিকর এবং টিভি নালাওয়াড়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুক্রবার সেটির শুনানি হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘পুরো ঘটনায় যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো কাজ করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ। রাজনৈতিক চাপে পড়ে জামাত সদস্যদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। নিজামুদ্দিন মার্কাজে যারা গিয়েছিলেন, তাদের নিয়ে বড় ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল।
দেশজুড়ে বিপর্যয় নেমে এলে, মহামারী পরিস্থিতি দেখা দিলে সরকার বলির পাঁঠা খোঁজার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে ওই বিদেশিদের বলির পাঁঠা করা হয়।’
বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সসময় ধরে দিল্লির ওই মার্কাজে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম চলে আসছে। তা নিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা অযৌক্তিক বলেও মন্তব্য করে আদালত।
পর্যবেক্ষণে বিচারপতিদ্বয় বলেন, ‘সরকারের দেয়া ভিসা নিয়েই ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আতিথেয়তার টানে ছুটে এসেছিলেন ওই বিদেশি নাগরিকরা। বিমানবন্দরে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই এ দেশে পা রেখেছিলেন তারা। ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে নয় বরং ইসলামের রীতিনীতির সাক্ষী হতেই যে মসজিদে থাকছেন তা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোও হয়েছিল।
তারপরও মার্কাজে যোগ দেয়া বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ে অনুশোচনার সময় এসেছে। সরকারের পদক্ষেপে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, অবিলম্বে তাতে প্রলেপ দেয়া দরকার।’
নিজামুদ্দিন মার্কাজে অংশ নেয়া তাবলিগ সদস্যদের বিরুদ্ধে সংক্রমণ ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে আদালত বলেন, ‘মসজিদে আশ্রয় নেয়া ওই বিদেশি নাগরিক এবং ভারতীয় মুসলিমরা কোনো উপদ্রবই করেননি। তাদের বিরুদ্ধে একটা অসন্তোষের আবহ তৈরি করার চেষ্টা চলছিল।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত যেসব নথিপত্র জমা পড়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, দিল্লির মার্কাজে আসা মুসলিমদের বিরুদ্ধেই শুধুমাত্র পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। অথচ অন্য ধর্মের বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’
আদালতের মতে, নিজামুদ্দিনে আসা বিদেশিদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা