এএফপির বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল, কী ঘটছে মালয়েশিয়ায়?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৪:৪৯ পিএম
ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগের পরে মালয়েশিয়ার সরকারের পতন ঘটেছে। আনোয়ার ইব্রাহীমের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ বন্ধ করে দিতে বিরোধীরা নতুন একটি জোট গঠনের চেষ্টা করলে দেশটির রাজনীতিতে এই টালমাটাল অবস্থা ঘটে।
৯৪ বছর বয়সী মাহাথিরকে অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের চরম চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে দুর্নীতিগ্রস্ত একটি সরকারের পতন ঘটাতে একটি অস্বস্তিকর জোট হিসেবে গড়ে উঠেছিল পাকাতান হারাপান। এর মধ্যে মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন, তা নিয়ে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছিল।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারাভোগ করা আনোয়ার ইব্রাহীমের নামই মাহাথিরের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছিল। কিন্তু তার দলের একটি প্রতিদ্বন্দ্বী উপদল আজমিন আলী নামের একজনকে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করায়।
আনোয়ারকে বাদ দিতে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতাসীন এমপিদের একটি জোট গঠনের চেষ্টা করেন আজমিন আলী। চলতি সপ্তাহেই ঘটে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি।
কিন্তু সোমবার সকালেই সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। মাহাথির মোহাম্মদ পদত্যাগ করেন। কাজেই ইতিমধ্যে অস্বস্তিকর হয়ে পড়া জোটের কফিনে শেষ লোহাটি মারেন তিনি।
কয়েকজন আইনপ্রণেতা বলেন, ক্ষমতা দখলের এই বিরক্তিকর চেষ্টার মধ্যে মাহাথির পদত্যাগ করেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, আনোয়ারের সঙ্গে দীর্ঘ তিক্ত সম্পর্কে থাকা মাহাথির ষড়যন্ত্রে প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে সায় দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে এখন ব্যতিক্রমী কিছু না ঘটলে মাহাথিরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। রাজা তাকে অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। আর বড় একটা সংখ্যক এমপি তাকেই প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
মঙ্গলবার বিরোধী শিবিরের এমপিরাও তার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। যার অর্থ হচ্ছে, নতুন সরকারে তারাও ভালো পদ-পদবি চাচ্ছেন।
তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া বিশেষজ্ঞ জেমস চিন বলেন, কৌশলগত কারণে মাহাথির পদত্যাগ করেছেন। নতুন একটি সরকার গঠনে তিনি সর্বাত্মক কর্তৃত্ব চেয়েছেন।
এর বিকল্প হতে পারে বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে একটি জোট গঠন করা। যাদের মধ্যে দুর্নীতিতেজর্জরিত সাবেক নেতা নাজিব রাজাকও রয়েছেন। যদিও ১এমডিবি রাষ্ট্রীয় তহবিল লুণ্ঠনের অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
২০১৮ সালে নিজেদের জোট জয়ী হলে আনোয়ার ইব্রাহীমের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাহাথির। নভেম্বরে এশীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের পর সেই প্রতিশ্রুতির বিষয়ে কিছুটা সায় তার মুখ থেকে বের হয়েছিল।
কিন্তু যখন নতুন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে, তখন সেই প্রতিশ্রুতির প্রতি কোনো সম্মান রাখা হবে কিনা: তা নিয়ে অনিশ্চয়তাই বেশি।
মাহাথিরের উপদেষ্টা কাদির জাসিন বলেন, নতুন ঘটনাবলীতে আনোয়ার ইব্রাহীমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সেই ওয়াদার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ, তাদের জোট পাকাতান হারাপান এখন আর ক্ষমতায় নেই।
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের এভাবে পতনের ঘটনায় ক্ষোভ ও হতাশাও দেখা গেছে। কারণ এই জোট নতুন যুগের শুরু ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল।
বেসরকারি সংগঠনের একটি জোট বিবৃতিতে বলছে, সরকার ও বিরোধী এমপিদের এমন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে আমরা ভীষণভাবে হতাশ। গণতান্ত্রিক দায়িত্বশীল দলীয় রাজনীতির সব নিয়মকে তারা অগ্রাহ্য করেছেন।
নতুন সরকার গঠনের আগের আসছে দিনগুলোতে মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার বেড়ে চলবে, সার্বিক পরিস্থিতি এমনটাই বলছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে দেশটির রাজা পার্লামেন্টের ২২১ এমপির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। বুধবার সেই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেও এই রাজনৈতিক ডামাডোলের অবসান হবে কিনা; সেই নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।
মালয়েশিয়ায় রাজার ভূমিকা অনেকটা আনুষ্ঠানিক। অধিকাংশ এমপি যাকে সমর্থন করেন, তিনি তাকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন।
এখনো অধিকাংশ রাজনৈতিক কৌশল রুদ্ধ দুয়ারের ভেতরেই ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসার ক্ষেত্রে মাহাথির জোরালো অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া একটি আগাম নির্বাচনের ঘোষণাও আসতে পারে।
ইস্ট এসিয়া ডেমোক্রাটিক স্টাডিজের হু ফেং সেন্টারের বিশ্লেষক ব্রিজিট ওয়েলস বলেন, নির্বাচনের চাপ বাড়ার আগে অন্তবর্তীকালীন নেতা হিসেবে একটি সরকার গঠনে মাহাথিরের সামনেও খুব বড় একটা সুযোগ নেই।