Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আনোয়ার ইব্রাহীমকে প্রধানমন্ত্রী না করতেই এই রাজনৈতিক নাটক?

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০২:১৬ এএম

আনোয়ার ইব্রাহীমকে প্রধানমন্ত্রী না করতেই এই রাজনৈতিক নাটক?

ছবি: এএফপি

হঠাৎই ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে রাজনৈতিক কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে মালয়েশিয়ায়। আনোয়ার ইব্রাহীম যাতে প্রধানমন্ত্রী হতে না পরেন, সেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে মাহাথিরের মিত্ররা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। 

এছাড়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুসারে আনোয়ারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করতেও অনিচ্ছুক ছিলেন মাহাথির। মূল সংকটটি বাঁধে সেখান থেকেই।

কিন্তু আনোয়ার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরা তাকে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করতে চাপ দিলে বিরক্ত হন ৯৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।

অ্যাটর্নি জেনারেল টম্মি থমাস বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে এক ব্যক্তি কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন, এখানে তেমন কোনো সময়সীমা উল্লেখ নেই। তবে তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার অধিকারী হবেন এবং নতুন মন্ত্রিসভাও ঘোষণা দিতে পারবেন।

সাংবিধানিকভাবে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতৃত্বে থাকা যে কোনো আইনপ্রণেতা সরকার গঠনের দাবি করতে পারেন। এরপর শপথ নেয়ার আগে তাকে রাজার অনুমতি নিতে হয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মাহাথির ও আনোয়ার মিলে পাকাতান হারাপান জোট গঠন করেছিলেন। মঙ্গলবার এই জোটের বৈঠক ডাকা হলেও প্রধানমন্ত্রী তাতে উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা নিশ্চিত না। তবে আনোয়ার ইব্রাহীম তাতে থাকবেন।

এছাড়া মাহাথিরের বেরসাতু পার্টির প্রধান মহিউদ্দিন ইয়াসিন, আজমিন আলী ও আনোয়ারের মধ্যে শক্তিপ্রদর্শনের মহড়াও হতে পারে। আজমিন আলীকে গত সোমবার আনোয়ারের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মাহাথিরকেই ফের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার দাবিও তোলা হচ্ছে কারো কারো পক্ষ থেকে।

অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে ফিরেছেন মাহাথির। একদিন আগে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ৯৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।

তবে পুত্রজায়ায় নিজের কার্যালয়ে আসার পর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পাওয়া আগ পর্যন্ত তাকে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন দেশটির রাজা।

নতুন পদে মাহাথির কতদিন থাকবেন, কখন একটি নতুন মন্ত্রিসভান ঘোষণা দেবেন এবং কীভাবে পরবর্তী সরকার গঠন করবেন, তা নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মালয়েশীয়দের জন্য এই অনিশ্চয়তার বেদনা কতটা কঠিন, তা বুঝিয়ে বলা মুশকিল। এমন এক সময় এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এসেছে, যখন মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ভালো যাচ্ছে না।

এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার মাহাথিরের নতুন পরিকল্পনা ঘোষণার কথা ছিল।

মূলত আনোয়ার ইব্রাহীম যাতে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে না পরেন, তা নিশ্চিত করতেই এসব কৌশল নেয়া হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরকে ক্ষমতায় থাকতেই তার জোটের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

এ রাজনৈতিক নাটক প্রথম প্রকাশ্যে আসে রোববার। যখন ক্ষমতাসীন জোটে আনোয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বীরা ও বিরোধী রাজনীতিবিদরা কুয়ালালামপুরে কয়েকদফা বৈঠক করেন, তখন নতুন একটি জোট গঠনের বিষয়টিই প্রকাশ্যে চলে আসে।

মূলত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আনোয়ারকে বাদ দিতেই এতসব উদ্যোগ। এর আগে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে তাকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছে।

সরকারের ভাগ্য সোমবারে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়লে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মাহাথির। সরকারের মুখ্যসচিব বলেন, সব মন্ত্রীদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। তবে নতুন জোট গঠনে মাহাথিরও জড়িত বলে জল্পনা-কল্পনার মধ্যে আনোয়ার ও তার অংশীদাররা বলেন, তিনি এতে জড়িত ছিলেন না।

মাহাথিরের সঙ্গে আনোয়ারের এক ধরনের ঝোড়ো সম্পর্ক রয়েছে। আনোয়ার বলেন, ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণের কথা মাহাথির তার কাছে অস্বীকার করেছেন। কাজেই বিষয়টি পরিষ্কার যে আগের সরকারের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে তিনি কাজ করবেন না।

সংযুক্ত মালয়স জাতীয় সংস্থা(ইউএমএনও) নামে নতুন জোট গঠনের প্রস্তাবে আগের ক্ষমতাসীন দলকেও অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। অথচ গত দুই বছর আগে ওই দলের প্রধান নাজিব রাজাককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।

তখন দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত জোটকে মোকাবেলায় নিজেদের মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রাখতে রাজি হয়েছিলেন আনোয়ার ও মাহাথির।

এর আগে ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মাহাথির। কিন্তু নতুন সরকারের দায়িত্ব আনোয়ার ইব্রাহীমে হাতে সোপর্দ করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি ৯৪ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী।

পাকাতান হারাপান জোটের অংশীদার ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য লিম গুয়ান ইনজ বলেন, সরকার পতনের দুরভিসন্ধিমূলক চেষ্টার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন মাহাথির।

মাহাথির স্পষ্টভাবেই বলেন, তিনি ইউএমএনও’র সঙ্গে কাজ করতে পারবেন না। কারণ আগের নির্বাচনে এই জোটকে হারাতে তিনি কঠিন পরিশ্রম করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে তার দল তাকে নিয়োগ দিয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে মাহাথিরের বেরসাতু পার্টি। আর আনোয়ার ইব্রাহীমের দলের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতাও পদত্যাগ করেছেন। এতে পাকাতান হারাপান জোটের ত্রাহী দশা।

কাজেই নতুন একটি প্রতিদ্বন্দ্বী জোট গঠনের বিষয়টিও এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। নিজের দল থেকে অবশ্য মাহাথিরও পদত্যাগ করেছেন।

স্বাধীন নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান মেরদেকা সেন্টারের প্রধান ইব্রাহীম সুফিয়ান বলেন, মাহাথির ফের প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নিতে পারেন। কারণ সংকট শেষ পর্যন্ত তার পক্ষেই কাজ করছে। এই পরিস্থিতি ক্ষমতাসীন জোটকে নতুন গড়ন দিতে তাকে একটি সুযোগ এনে দিচ্ছে।

এই নাটকের ফল এখনো পরিষ্কার হয়নি। বিশ্লেষকদের ধারনা, আগাম নির্বাচনের ঘোষণাও আসতে পারে।

নাজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সাবেক শত্রু মাহাথিরের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন আনোয়ার। ১এমডিবি দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন নাজিব রাজাক।

গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে মাহাথির-আনোয়ারের কঠিন রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রধান্য বিস্তার করে আসছিল। ১৯৯০ এর দশকে আনোয়ার ইব্রাহীমকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

পরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পাকাতান হারাপানকে সবসময়ই একটি অস্বস্তিকর জোট হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে।

দেশটির নৃতাত্ত্বিক মালয় মুসলিম সংখ্যালঘুদের দিকে নজর দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সংস্কারের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে রয়েছেন।

মালয়েশিয়ায় জাতিগোষ্ঠী ও মালয়দের অধিকার সুরক্ষা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের ৬০ শতাংশই মুসলমান। এছাড়া নৃতাত্ত্বিক চায়না ও ভারতীয় সংখ্যালঘুরাও রয়েছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম