ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের জেফ বেজোসের মোবাইল হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ফেসবুকের কোনো ত্রুটি দেখছেন না সামাজিকমাধ্যমটির নীতিমালাবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা নিক ক্লেগ।
বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের এই কর্মকর্তা অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতার কথাই বলেছেন।-খবর বিবিসির
হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল ক্লেগকে। তবে এ বিষয়ে তিনি যথাযথ জবাব না দিয়ে আইফোনের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদের অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ করে তাদের ফোনেই সমস্যা রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি রয়েছে।
তার মতে, যেহেতু বার্তা পাঠানোর পর হ্যাকের কথা বলা হয়েছে, তাই মনে হচ্ছে তাদের ফোনেই কিছু থাকতে পারে। বিষয়টা এমন যে, কেউ আপনার মেইলে ক্ষতিকর কিছু পাঠাল কিন্তু আপনি তা না খোলা পর্যন্ত সক্রিয় হবে না।
এই ফেসবুক কর্মকর্তা বলেন, আমি মনে করি, এটা এ ধরনের কোনো বিষয়। তাদের অপারেটিং সিস্টেমে কোনো কিছু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে অবশ্য হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি বিস্তারিত বলা হয়। তবে ক্লেগ যে দুটি বিষয় উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপের এনক্রিপশন নিরাপদ রয়েছে এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে যদি বেজোসের ফোন হ্যাকড হয়ে থাকে, তবে তা ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের কারণেই হয়েছে।
এদিকে সৌদি যুবরাজ ২০১৮ সালের বসন্তে তিন সপ্তাহের আন্তঃদেশীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান। মূলত সৌদি আরবের প্রগতিশীল ভিশন তুলে ধরতেই ছিল তার এ সফর।
এ সফরে মার্কিন ধনকুবের ও দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি যুবরাজ। এ সময়েই মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচনা করে জামাল খাসোগির লেখা প্রতিবেদন ছাপায় বেজোসের ওয়াশিংটন পোস্ট। এর পরই বেজোসের ফোন হ্যাকড হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার পর মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে সৌদি গোয়েন্দারা।
সেই দায় থেকে রেহাই পেতে সৌদি যুবরাজের চেষ্টার অংশ হিসেবে জেফ বেজোসকে হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ জাতিসংঘের খ্যাতিমান দুই মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একজন অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, জেফ বেজোসের ফোন হ্যাকিং অনেক বড় ঘটনা। তিনি কোনো সৌদি নাগরিক না, তিনি কৌশলগত আগ্রহের ব্যক্তি এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক হওয়ার কারণেই তিনি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন।
বুধবার দুই বিশেষজ্ঞের বিবৃতি অনুসারে, হোয়াটসঅ্যাপে যুবরাজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে একটি সাংকেতিক কোডের ভিডিও গ্রহণ করেন আমাজনের প্রধান নির্বাহী বেজোস। আর এই ভিডিও ডিজিটাল স্পাইওয়্যারে ভরা ছিল।
স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার সাধারণত নিজের অজান্তেই ডিভাইসে ডাউনলোড ও ইনস্টল হয়ে তথ্য অন্য কোনো কারও কাছে পাচার করে দেয়। গুপ্তচরবৃত্তির জন্যই এটি ব্যবহার করা হয়।
কাজেই পশ্চিমা বিশ্বে এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজের ওই ভিডিও দেখার পর বেজোস নিজের ফোনে অন্যের নজরদারি সক্রিয় করে দেন। ২০১৮ সালের মে মাসে এ ঘটনা শুরু হয়েছে। ক্যালামার্ডের মতে, পরবর্তী ৯ মাস ধরে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেজোসের ফোনে এই নজরদারি অব্যাহত ছিল।