যেভাবে জঙ্গি হলেন ভারতের নামকরা পুলিশ অফিসার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০১:৩৬ পিএম
যেভাবে জঙ্গি হলেন ভারতের নামকরা পুলিশ অফিসার দেবেন্দ্র সিংহ। ছবি-আনন্দবাজার
ভারতের রাষ্ট্রপতি পদকজয়ী পুলিশ কর্মকর্তা দেবেন্দ্র সিংহ। জঙ্গি দলে যোগদানের দায়ে সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর জম্মু কাশ্মীর পুলিশের সাসপেন্ডেড এই ডিএসপি এখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বহুলচর্চিত নাম।
কিন্তু নামকরা একজন পুলিশ অফিসার কীভাবে জঙ্গি হলেন তা নিয়ে বিশদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলওয়ামা জেলার ত্রালের বাসিন্দা দেবেন্দ্র শ্রীনগরের অমর সিংহ কলেজের সাবেক ছাত্র। ১৯৯৪ সালে তিনি জম্মু কাশ্মীর পুলিশে যোগ দেন এস আই পদে। পরে স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ বা এসওজি-র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হন।
গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি শ্রীনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেন্ট ছিলেন।
দেবেন্দ্রর অতীত জীবন নিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তোলাবাজি এবং দুর্নীতির অভিযোগে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল এসওজি থেকে। কিছুদিন সাসপেন্ডেড থাকার পরে তাকে পাঠানো হয় শ্রীনগর পুলিশ কন্ট্রোল রুম বা পিসিআর-এ।
এরপর পদোন্নতিও হয়। ২০০৬ সালে তিনি পুলিশের ডেপুটি সুপার হন। তার আট বছর পর তিনি স্থানান্তরিত হন ট্রাফিক পুলিশে।
গত বছর দেবেন্দ্র কর্মরত ছিলেন শ্রীনগর বিমানবন্দরের অ্যান্টি হাইজ্যাকিং ইউনিটে। কিছু দিনের মধ্যেই তার পদোন্নতির কথা ছিল। সে ক্ষেত্রে পুলিশ সুপার পদে উন্নীত হতেন তিনি।
দেবেন্দ্র সিংহের পাওয়া পদক নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। জম্মু কাশ্মীর পুলিশ টুইট করে জানিয়েছে, দেবেন্দ্রকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাহসিকতার পদক দেয়া হয়নি। ২০১৮-র স্বাধীনতা দিবসে তিনি জম্মু কাশ্মীরের পুলিশের একজন কর্মী হিসেবে সাহসিকতার পদক পেয়েছিলেন।
এর আগে আফজল গুরুর মুখে দেবেন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা গেছে। সংসদ হামলাকাণ্ডের মূল চক্রী আফজলকে ফাঁসি দেয়া হয় তিহাড় জেলে, ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি।
২০১৩ সালেই লেখা আফজলের একটি চিঠিতে দেবেন্দ্রর উল্লেখ ছিল। সেখানে আফজল বলেছিলেন, দেবেন্দ্র তার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন জনৈক মহম্মদ নামে এক ব্যক্তির। সংসদ হানায় আর এক অভিযুক্ত ওই মুহাম্মদকে নাকি নিরাপদে দিল্লিতে পৌঁছে দেয়ার জন্য আফজল গুরুকে বলেছিলেন দেবেন্দ্র।
তদন্তে জানা গেছে, দেবেন্দ্র গত ১১ জানুয়ারি তার ডিউটিতে অনুপস্থিত ছিলেন। ১২ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটিও চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে গেলেন তিনি। হিজবুল কম্যান্ডার এবং প্রাক্তন পুলিশকর্মী নভিদ বাবার সঙ্গে তার কথোপকথন ধরা পড়ে যায় গোয়েন্দাদের কাছে।
গোয়েন্দাদের কাছে দেবেন্দ্রর যুক্তি ছিল তিনি জঙ্গিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন তাদের বড় কোনো নেতাকে জালে ধরবেন বলে। কিন্তু তার দাবি ধোপে টেকেনি। প্রোটোকল অমান্য করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রিভলভার ও একে ৪৭ রাইফেল।
গোয়েন্দাদের দাবি, দেবেন্দ্র পরিকল্পনা করেছিলেন হিজবুল জঙ্গিদের কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানে পাঠানোর। তার জন্য নাকি তাকে ১২ লাখ টাকা দেয়াও হয়েছিল! দেবেন্দ্রর জম্মু এবং ত্রালের বাড়িতেও নাকি বিভিন্ন সময়ে গেছে জঙ্গিরা।
আইজিপি কাশ্মীর বিজয়কুমার জানিয়েছেন, দেবেন্দ্র সিংহ এর আগে জঙ্গিদমন অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তারপরেও ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন। তাকে জেরা করা হচ্ছে। আনল’ফুল অ্যাক্টিভিটিজ অ্যাক্ট এবং অস্ত্র আইনে তদন্ত চলছে।