‘বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ছিল আইনের লঙ্ঘন’
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:০৭ এএম
ফাইল ছবি
উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ৪৬০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ছিল আইনের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ডন অনলাইনের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।
মসজিদটির জায়গায় হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের রায়ের পাশাপাশি নতুন একটি মসজিদ নির্মাণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জমি বরাদ্দেরও নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
আর সেই জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ভারতীয় সরকারকে। কয়েক দশক ধরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একটি ইস্যুর এভাবেই সমাধান দিয়েছেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের এই সর্বসম্মত রায়ে দেশটিতে হিন্দু-মুসলমান বিরোধে তৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলমান।
মামলার একটি পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড রায়ের রিভিউর জন্য আবেদন করতে পারেন। এতে আরেকটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের দিকে যাবে এই ইস্যুটি।
আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি বলেন, এটা ন্যায়বিচার হতে পারে না।
আদালতের রায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তারা সেখানে একটি মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
১৯৮০ এর দশক থেকেই মসজিদটি গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটি মন্দির নির্মাণের চাপ বাড়াতে প্রচার শুরু করে হিন্দুত্ববাদীরা ও ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি।
১৯৯২ সালে দুই লাখ কট্টর হিন্দুত্ববাদী জড়ো হয়ে কয়েকশ বছরের মসজিদটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়।
এতে ১৯৪৭ সালে রক্তক্ষয়ী দেশভাগের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে ভারতে। এতে দুই হাজারের বেশি লোক নিহত হন, যাদের অধিকাংশই মুসলমান।
জায়গাটিতে দেবতা রামের একটি নতুন মন্দির নির্মাণ করবেন বলে দাবি করতে থাকেন কট্টরপন্থী হিন্দুরা। মসজিদের জায়গাটিতেই রামের জন্ম হয়েছিল বলে তারা মনে করেন।
হিন্দু দেবতার নামের একটি মন্দির গুঁড়িয়েই ওই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল বলে তারা দাবি করতে থাকেন।
মসজিদটি ধ্বংসের পর হিন্দু-মুসলমান দুই পক্ষই নিম্ন আদালতে ইস্যুটি তোলেন। ২০১০ সালে আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, মসজিদের জায়গার দুই ভাগ পাবেন হিন্দুরা, আর একভাগ মুসলমানরা।
রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দুই পক্ষই সুপ্রিম কোর্টের দারস্ত হন।
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এএসআইয়ের প্রতিবেদনে যথেষ্ট উপাত্ত রয়েছে, যাতে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে খালি জায়গায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। মসজিদের নিচে আরেকটি স্থাপনা ছিল। তবে সেই স্থাপনাটি কোনো ইসলামিক অবকাঠামো ছিল না।
‘কিন্তু এএসআইর প্রতিবেদন জানায়নি যে মসজিদ নির্মাণের জন্যই সেই স্থাপনাটি ভাঙা হয়েছিল কিনা। মন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল কিনা, সেই প্রশ্নটি জবাবহীনই রয়ে গেছে।’
প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, উপাসকদের বিশ্বাস ও আস্থা অবশ্যই আদালতকে মেনে নিতে হবে। আদালতকে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।