ইসরাইলকে বর্জনে সায়, জার্মানিতে ব্রিটিশ লেখিকার পুরস্কার প্রত্যাহার

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:১৯ পিএম

ব্রিটিশ-পাকিস্তানি লেখিকা কামিলা শামছি। ছবি: গার্ডিয়ান
ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলকে বর্জন, পরিত্যাগ ও নিষেধাজ্ঞা(বিডিএস) আন্দোলনে সায় দেয়ায় ব্রিটিশ-পাকিস্তানি লেখিকা কামিলা শামছিকে দেয়া সাহিত্য পুরস্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানির শহর ডোর্টমান্ড।
খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক কামিলা শামছিকে চলতি বছরে শহরটির নেল্লি সাচস পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। এর আগে এক ইহুদি কবি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।-খবর মিডল ইস্ট আই
কামিলার সাহিত্যকর্মের জন্য চলতি মাসে আট সদস্যের বিচারকের প্যানেল এ পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করেছিলেন।
বুধবার এক বিবৃতিতে শহরটি জানায়, বিচারকরা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন এবং এ বছর কাউকেই এ পুরস্কার না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আগের গবেষণা সত্ত্বেও ২০১৪ সালে ইসরাইলের ফিলিস্তিনি নীতির জন্য দেশটিকে বর্জন আন্দোলনে লেখিকার যোগ দেয়ার বিষয়ে বিচারকরা আগে সতর্ক ছিলেন না।
এতে আরও বলা হয়, বিডিএসের অংশ হিসেবে ইসরাইলকে সাংস্কৃতিকভাবে বর্জনে সক্রিয় অংশগ্রহণে কামিলা শামছির রাজনৈতিক অবস্থান এই পুরস্কারের সংবিধিবদ্ধ উদ্দেশ্যাবলীর সঙ্গে যায় না। তার অবস্থান নেল্লি সাচস পুরস্কারের চেতনার বিরোধী।
বিচারকদের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এই লেখিকা বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইল সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং নৃশংসতার জন্য রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে বিডিএস আন্দোলন কারো ক্ষোভের বিষয় হওয়া খুবই অন্যায় ও লজ্জাজনক।
টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা সত্যিই দুঃখের বিষয় যে বিচারকরা চাপের মুখে নতি স্বীকার করে এমন একজন লেখককে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার পর তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, যিনি বাক ও বিবেকের স্বাধীনতার চর্চা করেছেন।
ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারে প্রতি সম্মান দেখাতে ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে ২০০৫ সাল থেকে বিডিএস আন্দোলন শুরু হয়েছে।
সমর্থকরা বলছেন, ১৯৮০ এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী প্রচার ও ১৯৫০-১৯৬০ এর দশকের শুরুতে আফ্রিকান আমেরিকান মানবাধিকার আন্দোলন থেকে তারা এই উদ্যোগটি বেছে নিয়েছেন।
লন্ডনে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের শহরে জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন কামিলা শামছি। ব্রোকেন ভার্সেস, ব্রান্ড শ্যাডোজ ও হাউস ফায়ারসহ বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি।
উপন্যাসের জন্য ২০১৮ সালে তনি ওমেন’স পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৭ সালের বুকার পুরস্কারের তালিকায়ও তার নাম ছিল।
প্রতি দুই বছর পর পর নেল্লি সাচস পুরস্কার দেয়া হয়। বিজয়ী লেখককে সাড়ে ১৬ হাজার ডলার পুরস্কার মূল্য হস্তান্তর করা হয়।
বিডিএস আন্দোলনকে ইহুদিবিদ্বেষী আখ্যায়িত করে গত মে মাসে একটি আইন পাশ করে জার্মানির পার্লামেন্ট। হলোকাস্টের সময় নাৎসি আন্দোলন যে পদ্ধতি ও ধরন অবলম্বন করেছিল, তেমন উপায় বেছে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে।
কিন্তু বিডিএস আন্দোলন দাবি করছে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্ণবাদ, অবরোধ, জাতিগত নিধন ও সামরিক দখলদারিত্বের মতো অপকর্মে সহায়তা করছে জার্মানি।
বিডিএস আন্দোলনে কামিলা শামছির অংশগ্রহণকে সমর্থন জানিয়েছেন ব্রিটিশ-পাকিস্তানি গল্প লেখক ও ঔপন্যাসিক আমের হোসেন।
তিনি বলেন, কামিলা সর্বদাই একজন লেখিকা এবং ঐক্য, সততা ও নৈতিক সাহসিকতার দিক থেকে একজন গণবুদ্ধিজীবী। কাজেই মানবাধিকারকে সমর্থন করায় একজন লেখিকার কাছ থেকে পুরস্কার কেড়ে নেয়ায় আমি অবাক।
আমের হোসেন বলেন, এতে তার কিছু হবে না, বরং যারা তার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন, তারাই ক্ষতির মুখে পড়বেন।