ইতালিতে কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশি তরুণ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:৩২ এএম
ইতালির রোমে রাস্তায় দুই হাজার ইউরোসহ একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বাংলাদেশি তরুণ মুসান রাসেল।
সেটি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার পর প্রতিদান হিসেবে তাকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাবও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেন রাসেল।
এর পর থেকে মুসানকে নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা ইতালির গণমাধ্যমে। খবর বিবিসির।
ছবিসহ রাসেলের সাক্ষাৎকার ছেপেছে ইতালির লা রিপাবলিকা পত্রিকা। সেখানে তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন পুরো ঘটনা।
বাংলাদেশ থেকে সাত বছর আগে রোমে আসেন রাসেল। রোমের রাস্তায় তিনি একটি লেদার সামগ্রীর স্টল চালান।
গত শুক্রবার তিনি রাস্তায় একটি মানিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। এটি হাতে নিয়ে তিনি দেখতে পান ভেতরে অনেক নোট, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র আছে।
এর পর আর কিছু না ভেবেই এটি নিয়ে তিনি চলে যান নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে। সেখানে ওয়ালেটটি তুলে দেন পুলিশের হাতে।
এর পর পুলিশ এটির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার কাছে ওয়ালেটটি ফিরিয়ে দেয়। মালিক রাসেলের সততার দৃষ্টান্তে অভিভূত হয়ে তাকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
লা রিপাবলিকা পত্রিকা তার কাছে জানতে চেয়েছিল, প্রথম যখন তিনি ওয়ালেটটি খুঁজে পান, তখন তিনি কি ভেবেছিলেন।
রাসেল বলেন, মানিব্যাগের ভেতরটা দেখে তার মনে হয়েছিল, যিনি এগুলো হারিয়েছেন। তিনি নিশ্চয়ই খুবই সমস্যায় আছেন।
এতে ছিল কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আরও কিছু কাগজপত্র। আর টাকা তো ছিলই।
কত টাকা বলতে পারব না। কারণ আমি গুনে দেখিনি। আমি সব কিছু পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলাম।
রাসেল ভালো ইতালিয়ান বলতে পারেন না। কিন্তু তার পরও তিনি তার বক্তব্য পুলিশকে বোঝাতে পারলেন।
মানিব্যাগে একতাড়া নোট দেখে পুলিশ অবাক হলো। তখনই তিনি প্রথম জানতে পারেন যে ভেতরে দুই হাজার ইউরো ছিল।
পুলিশ তাকে ধন্যবাদ জানালো মানিব্যাগটি জমা দেয়ার জন্য। জবাবে রাসেল বলেন, এটি আমার কর্তব্য। আমি আমার কাজ করেছি। এটির মালিক আমি না, ঘটনাচক্রে খুঁজে পেয়েছি মাত্র।
রাসেল জানান, প্রথম জীবনে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। দিন-রাত খাটতে হয়েছে। গত দুবছর ধরে তিনি লেদার স্টলটি চালান।
ওয়ালেটটি পুলিশের কাছে দিয়ে তিনি কাজে ফিরে আসেন। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তাকে ফোন করে।
পুলিশ জানায়, ওয়ালেটের মালিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাসেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।
প্রথমে রাসেল যেতে চায়নি। কারণ সবাই তার দিকে মনোযোগ দিক, সেটি তিনি চাননি। তবে শেষ পর্যন্ত রাসেল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ওই ভদ্রলোক রাসেলের দেখা পেয়ে আসলেই খুশি হয়েছিলেন। তাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে পেরে খুশি ছিলেন।
রাসেল অবশ্য তাকে বলেছেন, এর কোনো দরকার ছিল না। আমি এমন ব্যতিক্রমী কিছু করিনি। কিন্তু তিনি রাসেলকে একটা পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, রাসেল যে পুরস্কার চায় সেটিই দিতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু রাসেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করায়, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোনো সন্মানের ব্যাপার হতো না। আমি বরং তাকে আমার স্টলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি খুশি হব যদি উনি আমার দোকানের কাস্টমার হন।
রাসেল আরও বলেন, আমি যে ওয়ালেটটি খুঁজে পেয়েছিলাম, সেটি ঘটনাচক্রে। এটির জন্য পুরস্কার নেয়া ঠিক নয়।