উইঘুরে মুসলিম নির্যাতনের সমর্থক সৌদি-পাকিস্তান!
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০১৯, ০১:২০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
চীনে উইঘুরে মুসলমানদের বন্দিশিবিরে আটকে রেখে নির্যাতনের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়েছে সৌদি আরবসহ ৩৭টি দেশ।
জাতিসংঘে পাঠানো ওই চিঠিতে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চীন সরকারের আচরণের প্রশংসা করেছেন তারা।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে ডন উর্দু জানায়, উইঘুর বন্দিশিবিরে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিমকে আটকে রাখা এবং মুসলিম শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো যখন চীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে, সে সময়েই সৌদিসহ মুসলিম প্রধান কয়েকটি দেশ চীনের প্রতি এ সমর্থন জানালো।
সৌদি,রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইমরান খানের পাকিস্তান সরকারও জাতিসংঘে পাঠানো ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে।
ডন উর্দু আরও জানায়, গত বুধবার উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা নিপীড়নের বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছিল ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও জাপানসহ ২২টি দেশ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো লিখিত বার্তায় এসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা চীনের উইঘুর নীতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। এর পাল্টা জবাব হিসেবেই চীনের মিত্র ৩৭টি দেশ জাতিসংঘে এ চিঠি পাঠালো।
উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানানো দেশগুলোর চিঠিতে জিনজিয়াং প্রদেশে চীন সরকারের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘চীনের অসামান্য অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
উইঘুর বন্দিশিবির বিষয়ে চীনকে সমর্থন জানানো চিঠিতে সৌদি আরবসহ অন্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হলো- রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তান, ওমান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, বার্মা, ফিলিপাইন, কিউবা এবং বেলারুশ। তাছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে চীন।
চিঠিতে বলা হয়, আমাদের জানামতে সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ধর্মীয় চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি জিনজিয়াংয়ের জাতিগত গোষ্ঠীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চীন জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদবিরোধী নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেটিকে বন্দিশিবির বলছে ওই চিঠিতে এসব বন্দিশিবিরকে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ বলে অবহিত করা হয়েছে।
চিঠিতে দাবি করা হয়, চীন সরকারের এমন পদক্ষেপের ফলে জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। সব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি জানিয়েছিল, চীন সরকার দেশটির ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশিবিরে আটকে রেখেছে।
চীনের জাতিগত উইঘুর মুসলমানদের বেশিরভাগ সেদেশের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাস করেন। প্রদেশের শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ জনগোষ্ঠী উইঘুর সম্প্রদায়ের। জিনজিয়াংয়ের মুসলিম সংখ্যালঘুদের ব্যাপক হারে আটক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিসংঘের ওই কমিটির কাছে নানা তথ্যচিত্র তুলে ধরে দাবি করেছে, চীনা মুসলমানদেরকে বন্দিশিবিরে আটকে রেখে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
উইঘুর মুসলমানদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস বলেছে, বন্দিদেরকে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটকে রাখা হচ্ছে এবং সেখানে তাদেরকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শ্লোগান দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। বন্দিদেরকে ঠিকমতো খেতে দেয়া হয় না এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হয়।