![সম্পর্ক মেরামতে ইরান সফরে ইমরান খান](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2019/04/21/image-169548-1555868340.jpg)
ছবি: রয়টার্স
আঞ্চলিক সংকট ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে রোববার দুই দিনের ইরান সফরে গেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসীরা ১৪ পাকিস্তানিকে বাস থেকে নামিয়ে হত্যার একদিন পর তিনি এই সফরে গেলেন।
ইরানের টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর এই প্রথম তিনি ইরান সফরে আসেন।
সোমবার তেহরানে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন, সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাস মোকাবেলা ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
গত কয়েক মাস ধরে ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। দুই দেশের পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিদ্রোহীদের দমনে তারা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সীমান্তেই এসব বিদ্রোহীরা আশ্রয় নিয়ে হামলা চালাচ্ছেন।
বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা নতুন একটি গোষ্ঠী বৃহস্পতিবারের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইরান সীমান্তে পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে এই গ্রুপটি সক্রিয় রয়েছে।
সেদিন চারটি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে প্রথমে তাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করেন বিদ্রোহীরা। তাদের কয়েকজনকে আলাদা করে দাঁড়াতে বলেন। পরে তাদের অপহরণ ও হত্যা করা হয়েছে।
বেলুচ রাজি আজই সানগার(বিআরএএস) নামের একটি গ্রুপ দাবি করেছে, বাস ভ্রমণরত পাকিস্তানের নৌ ও কোস্ট গার্ড কর্মকর্তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন তারা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরাইশি শনিবার বলেন, এই হামলার ঘটনায় তার দেশ ক্ষুব্ধ। কাজেই বিআরএএস বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নতুন এই গোষ্ঠীটির প্রশিক্ষণ ও রসদ শিবির সীমান্তে ইরানের ভেতরেই। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের কাছে নিজ দেশের ক্ষোভের কথা তিনি জানিয়েছেন।
তবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ নিয়ে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইরনার খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাকিস্তানি সরকার ও জনগণের প্রতি এ ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে রোববার দুই দিনের সফরে ইরান যাবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
এর আগে গত মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ওপর এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৭ জওয়ান নিহত হন। এরপর থেকে গত কয়েক মাস প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
ইরানি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, পাকিস্তানের ভেতর থেকে এসে বিদ্রোহীরা তাদের জওয়ানদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জইশ আল-আদল ওই হামলার দায় নিয়েছে। ইরানের বেলুচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের জন্য আরও বেশি অধিকার ও তাদের জীবন যাপনের মানে উন্নতি চাচ্ছেন তারা।
পাকিস্তান এসব বিদ্রোহীদের নিরাপদ স্বর্গ বলে আখ্যায়িত করেছেন ইরানের শিয়া মুসলিম কর্তৃপক্ষ। কাজেই এসব বিদ্রোহীদের দমনে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে ইরান।
ইরান-পাকিস্তানের দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে নৃতাত্ত্বিক বেলুচদের অবস্থান। কাজেই বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই বিশাল সীমান্ত দিয়ে চলাচল করছে। যা দুই দেশের কর্মকর্তাদের বিরক্তির অন্যতম কারণ।
কুরাইশি বলেন, সীমান্তে বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। আফগান সীমান্তে যেটা শুরু করা হয়েছে। কাজেই সাড়ে নয়শত কিলোমিটারের এই বিস্তৃত সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।