লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় নজরে যারা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০২:২৫ এএম
হেমা মালিনী, এইচ ডি দেবগৌড়া ও বীরাপ্পা মইলি। ছবি: যুগান্তর
লোকসভা নির্বাচনে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে। চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এই রাজ্যের লোকসভার ৩৯ আসনের ৩৮টিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে আজ। ৮২২ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ তামিল ভোটার।
এর সঙ্গে বিধানসভার আরও ২২ আসনেও ভোটগ্রহণ হবে। বাই-ইলেকশনের (উপনির্বাচন) এ লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন ২৬৯ প্রার্থী।
আজ ১৮ আসনে ও লোকসভার শেষ দিন ১৯ মে বাকি চার আসনে এই দুই পর্বে শেষ হবে বিধানসভার ভোট। আসনের দিক কম হলেও এবারের নির্বাচনে লোকসভার চেয়ে বিধানসভাই যেন বড় হয়ে উঠেছে।
কারণ এর ওপরই নির্ভর করছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন অল ইন্ডিয়া দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগামের (এআইএডিএমকে) পালানিস্বামী সরকার। তামিলনাড়ুর অভিভাবক আম্মা (জয়ললিতা), করুণানিধি শূন্য তামিল ভূমিতে এই নির্বাচনকে নিজেদের টিকে থাকার লড়াই হিসেবে দেখছে তার দলটি।
বিপরীতে যেকোনো উপায়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া এমকে স্টালিনের দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে)।
আজ দ্বিতীয় দফার লোকসভা ভোটে রয়েছে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী। এদের মধ্যে আছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, বিজেপি এমপি হেমা মালিনী, কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলি, ডিএমকে নেত্রী কানিমোজি থেকে শুরু করে আরও অনেকে।
পিটিআই জানিয়েছে, রাজ্যের অন্যতম আঞ্চলিক দল টিটিভি দিনাকরণ ১৮ বিধায়ক (এমএলএ) অযোগ্য ঘোষিত হওয়া, ডিএমকের প্রতিষ্ঠাতা নেতা ও বিধায়ক এম করুণানিধি ও এআইএডিএমকে দলের দুই বিধায়কের মৃত্যু এবং দাঙ্গার মামলায় অভিযুক্ত এআইএডিএমকের মন্ত্রীর অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার কারণে বাই-ইলেকশনের আসনগুলো খালি হয়েছে।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১১৩ আসন। কিন্তু এর মধ্যে পাঁচ বিধায়ক টিটিভি গোষ্ঠীর প্রতি অনুগত। প্রতিদ্বন্দ্বী ডিএমকে জোটের রয়েছে ৯৭টি আসন।
এর মধ্যে কংগ্রেসের আসন ৮টি ও আঞ্চলিক দল আইইউএমএলের ১টি। বাই-ইলেকশনে ডিএমকে ২১টি আসন জিতলে শরিক দলগুলো নিয়ে সরকার গঠনের অবস্থানে থাকবে।
বিধানসভার ২৩৪টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ১১৮টি আসন। বিপরীতে টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্ষমতাসীনদের জিততে হবে ১০ আসন।
সুতরাং ২৩ মে ভোট গণনা ও ফল ঘোষণার সময় লোকসভার নির্বাচনের চেয়ে বিধানসভার বাই-ইলেকশনের দিকেই বেশি খেয়াল থাকবে দলগুলোর।
রাজ্যের সাবেক দুই বর্ষীয়ান নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা ও এম করুণানিধির মৃত্যুর পর এটিই প্রথম কোনো লোকসভা নির্বাচন। ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনে এম করুণানিধি পাঁচবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া তিনি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট, গল্প, নাটক ও কবিতা লেখে নিজের বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিভার মাধ্যমে তামিলনাড়ুর সমসাময়িক সংস্কৃতিকে যেমন ঋদ্ধ করেছেন, তেমনি এখানকার রাজনীতিকেও নতুন রূপ দিয়েছিলেন তিনি।
লাখো ভক্তের কাছে খ্যাতি পান ‘কালাইনর’ বলে। বিপরীতে জয়ললিতা এক হাতে শক্ত নেতত্বের দৃষ্টান্ত করেছিলেন। তিনি শুধু করুণানিধি ডিএমকে দলকেই প্রতিরোধ করেননি নয়াদিল্লির শ্রদ্ধা ও সম্মান আদায় করে নিয়েছিলেন।
ভালোবাসার আতিশয্যে তাকে ‘আম্মা’ বলে ডাকতেন ভক্ত ও সমর্থকরা। রাজ্যের বেশিরভাগই মানুষের কাছে এখনও ডিএমকে মানেই করুণানিধি।
অন্যদিকে এআইএডিমকে মানে দলের প্রতিষ্ঠাতা এমজি রামাচন্দ্রণ ও জয়ললিতা। আকাশছোঁয়া ব্যক্তিত্বের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই এবার এআইডিএমকে বর্তমানে যতটা দুর্বল, ডিএমকের অবস্থাও তাই।
নির্বাচনী লড়াইয়ের শুরু থেকেই লোকসভার চেয়ে বিধানসভাতেই বেশি গুরু দিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো। নির্বাচনে জয় পেতে একে অপরের ওপর তীব্র আক্রমণ থেকে শুরু করে ব্যাপক প্রচারণা করেছেন নেতারা।
এ ক্ষেত্রে ঢালাও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে পিছপা হননি। জনসভা-র্যালিতে লোক সমাগম বাড়াতে বস্তা বস্তা টাকা ছিটিয়েছেন।
ভোট কিনতে ব্যয় করেছেন কোটি কোটি রুপি। নির্বাচনে জিতিয়ে দিতে নেতাকর্মী-সমর্থকদের দিয়েছেন নানা আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি।
একদিন আগে বুধবারই ডিএমকের এক প্রার্থীর সিমেন্ট গুদাম থেকে ১১ কোটি ৮০ লাখ রুপি উদ্ধার করা হয়। ফলে রাজ্যের ভেলোর আসনে বাতিল করা হয়েছে ভোট।