ছবি: সিএনএন
কাশ্মীরের বাসিন্দা গোলাম রসুল খান এখানের সব কিছু দেখেছেন। এর মধ্যে পাক-ভারত দুটি যুদ্ধ হয়ে গেল। এ ছাড়া কয়েক ডজন সশস্ত্র সহিংসতাও তিনি দেখেছেন।
এতগুলো বছর কেটে যাওয়া ও সংঘাতের ঘটনা দেখে দেখে তিনি শান্তির আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ৭৬ বছর বয়স গোলাম রসুল বলেন, যদি আপনারা আমাদের শান্তি দিতে নাও পারেন, একটি বাংকার অন্তত দেন।-খবর সিএনএনের
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি শহরে বসবাস করেন তিনি। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছেই শহরটি। ফলে পাক-ভারত সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পড়ে যান তারা।
গত ফেব্রুয়ারিতে পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে একপশলা আকাশ যুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর অহরহ ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ছেন তারা।
গোলাম রসুল বলেন, আমরা বাংকার চাচ্ছি, যাতে সীমান্তের তীব্র গোলাবর্ষণের সময় আমরা সেখানে লুকিয়ে থাকতে পারি। এ ছাড়া আমাদের কোথাও যাওয়ার কিংবা সুরক্ষার উপায় নেই। আমরা সত্যিকারের এক অন্যায়ের মধ্যে আছি।
এই কাশ্মীরি বৃদ্ধের মতে, ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের মূল সমস্যাগুলো উপেক্ষা করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই তারা কেবল কাশ্মীর সংকটকে পুঁজি করে। বিশেষভাবে লোকসভা নির্বাচনের সময় এটিকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে গোলাবর্ষণ ছাড়াও বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে অনবরত লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
সহিংসতার এই চক্র কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মানুষের নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে।
গোলাম রসুল বলেন, এখানে বেঁচে থাকা ব্যয়বহুল, আর মৃত্যুই এখানে কেবল সবচেয়ে সস্তা।
এসব বিষয়ে সবার মনোযোগ টানতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী নাদিম আব্বাসি। নিজের মোবাইলে তিনি গোলাবর্ষণে মারাত্মকভাবে আহত রিয়াজ আহমেদের ছবি দেখান।
গত মার্চের শুরুতে উরিতে সীমান্তের গ্রামে গোলায় আহত ৩২ বছর বয়সী রিয়াজের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর হাসপাতালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
আব্বাসি বলেন, বাংকার থাকলে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন।
৭৫ বছর বয়সী নাদিম আব্বাসির জন্য সীমান্তের গোলাবর্ষণের ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রসিকতা করে তিনি বলেন, আপনার মতো বিদেশি সাংবাদিকদের এখানে আসা উচিত?
নাদিম বলেন, এটিই আমাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। এসব দেখে দেখেই আমরা বড় হয়েছি, মরেও যাব। আগামী প্রজন্মও এই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। এখানে পরিবর্তনের কিছু নেই। এ নিয়ে আমি হতাশ নই। আল্লাহর ইচ্ছায় যেকোনো দিন আমি মারা যাব।
কাশ্মীরের দুটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করে ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু তারা অখণ্ড কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করছে।
১৯৮৯ সাল থেকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়। কাশ্মীরিরা স্বাধীনতা কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হতে এর আগে শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার কাশ্মীরিকে জীবন দিতে হয়েছে। অঙ্গ হারানো, ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বেশুমার।
সংঘাতের প্রভাব কেবল সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নেই। শ্রীনগরসহ পুরো কাশ্মীরে তার প্রতিধ্বনি বিস্তার করছে।
গত মার্চে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিকরা যখন সেখানে যান, তখন শহরটি পুরোপুরি ভুতুড়ে দেখাচ্ছিল।
পুলিশি হেফাজতে এক স্বাধীনতাকামী শিক্ষকের মৃত্যুর পর পুরো কাশ্মীরে হরতাল ডাকা হয়েছিল। স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, রাস্তায় পুলিশ ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি।