মধ্যপ্রাচ্যের পর এবার মার্কিন আগ্রাসন আতঙ্কে লাতিন দেশগুলো

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১৬ এএম

ছবি: গার্ডিয়ান
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন, ব্রিটিশ ও তাদের মিত্রদের সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা পেতে যে একটি আইনগত মানদণ্ড দাঁড় করাতে চাওয়া হচ্ছে, সেটিকে কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো।
নিজেদের ভূখণ্ডে এ ধরনের হস্তক্ষেপের ন্যায্যতা দিতে একই মাপকাঠি ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে এই বাগড়া দিচ্ছে এই লাতিন দেশগুলো।-খবর গার্ডিয়ানের
সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো যে আনুষ্ঠানিক আইনগত ন্যায্যতা হাজির করেছে, তাতে আরও স্বচ্ছতা আনতে জাতিসংঘে এই উদ্যোগের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে মেক্সিকো সরকার।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো বলছে, অন্য দেশের ভূখণ্ডে যখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় সায় দেয়া হয়, তখন সামরিক শক্তির একটি ছোট গোষ্ঠী গোপনে নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে নিষ্পত্তি করে নেয়। অথচ আন্তর্জাতিক আইনের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি নিয়ে কোনো বৈশ্বিক বিতর্ক নেই।
আইএসবিরোধী লড়াই ও অন্যান্য বিদেশি সামরিক অভিযানে জড়িত দেশগুলো তাদের অভিযানের আত্মপক্ষ সমর্থনে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে। এতে সন্ত্রাসবাদের হুমকির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হচ্ছে যে, হুমকির মোকাবেলায় ওই সব দেশ অনিচ্ছুক কিংবা অক্ষম হওয়ায় তাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার পরেই সাধারণত এ রকম চিঠি দেয়ার প্রবণতা চলে আসছে। আইনবিষয়ক ওয়েবসাইট জাস্ট সিকিউরিটি এক লেখায় জাতিসংঘে মেক্সিকান মিশনের আইনি পরামর্শক পাবলো আরোচা ওলাবুয়েনাগা বলেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘অনিচ্ছা কিংবা অক্ষমতার’ মাপকাঠি ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা ও বৈধতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এ যাবত গুটিক কয়েক পশ্চিমা দেশ ব্যাপকভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।
তার যুক্তি হচ্ছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ ধারার অধীন এমন আত্মরক্ষার যুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার অভাবকে সম্মতি হিসেবে ব্যাখ্যা ধরা উচিত হবে না। বরং জাতিসংঘের ব্যবস্থায় এটি এক ধরনের অস্বচ্ছতারই প্রতিফলন।
সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা পেতে নিরাপত্তা পরিষদের ৫১ ধারার অধীন এ চিঠি প্রকাশ করা হয় না। সাধারণত তা নিরাপত্তা পরিষদের মোহাফেজখানায় গিয়ে জমা হয়।
ওলাবুয়েনাগা বলেন, অধিকাংশ সদস্য দেশকে এ বিষয়ে অন্ধকারে রাখা হয়। নিজের ব্যক্তিগত অভিমত থেকে তিনি জাস্ট সিকিউরিটিতে এ লেখাটি লিখেছেন। কিন্তু এ উদ্বেগ যে পুরো দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে বিস্তৃত, সেদিকে বেশি জোর দিয়েছেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানে বলপ্রয়োগের ন্যায্যতা পেতে ৫১ ধারার অধীন চিঠি জমা দেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিনিধিত্বকারী ৩৫ দেশ এক বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে।
হেইডেলবার্গের ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো পোলিনা স্টারস্কি বলেন, দেশগুলো তাদের সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা পেতে প্রকাশ্যে যোগাযোগ করছে নাকি বাকি দেশগুলোকে অন্ধকারে রাখছে, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা খুবই প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, অনিচ্ছা কিংবা অক্ষমতাকে আইনি মাপকাঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ করার এটি একটি বড় কারণ। এ ছাড়া ৫১ ধারার সঠিক ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ ভাষ্যে- দক্ষিণ আমেরিকায় এ নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মার্কিন সীমান্তে পৌঁছাতে অভিবাসীদের ঢলকে থামাতে মেক্সিকোর সশস্ত্র বাহিনীর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে কিংবা তারা অক্ষম।
গত মার্চে মেক্সিকোর মাদককারবারিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দাবি করেছেন, ভেনিজুয়েলায় হিজবুল্লাহ আন্দোলনের সক্রিয় কেন্দ্র রয়েছে। কাজেই আমেরিকার ঝুঁকি মুছে দিতে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।