ট্যারেন্ট ৫০ জনকে খুন করেছে, বিশ্বাসই হচ্ছে না দাদীর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০১৯, ০৬:১২ এএম
ব্রেন্টন ট্যারেন্ট
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৮ জন। বন্দুকধারী যুবক ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে আটক করেছে পুলিশ।তাকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডও দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের আদালত।
শনিবার আদালতে তোলা হলে ট্যারান্ট দাঁত বের করে হাসেন। আগাগোড়া ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে আনা প্রথম দফার খুনের অভিযোগ শুনেন ট্যারান্ট। হাতকড়া পরানো দু’টো হাত কখনও মুঠো করা। কখনও বুড়ো আঙুল ও তর্জনী জুড়ে বিশেষ মুদ্রা। যা ‘শ্বেতাঙ্গ-শক্তি’ প্রকাশের ভঙ্গি হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্বে।
এমন একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী যে এতগুলো মানুষ খুন করতে পারে বিষয়টি বিশ্বাসই করতে পারছে না তার পরিবার। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন তার দাদী জয়েস ট্যারেন্ট।
নাতির এই হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে দাদী বলেন, ‘কী করে এটা হয়? আমি খুবই মর্মাহত (বিশেষ করে ট্যারেন্ট এ কাজ করেছে), ও তো খুব ভাল ছেলে। বছরে দুবার গ্র্যাফটনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসত ও।’
জয়েস আরও বলেন, বড়দিনের সময়ও ট্যারেন্ট বাসায় গিয়েছিল।তখনও সে সবাইকে নিয়ে মজা করেছে। আনন্দে মাতিয়ে রেখেছে বাড়ির সবাইকে।
জানা গেছে, ট্যারেন্টের মা শ্যারন পেশায় একজন শিক্ষক। গত শুক্রবার মসজিদে হামলার সময় তিনি ইংরেজি ক্লাসে ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের ফোনে ছেলের কথা জানতে পারেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, গতকাল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর থেকে মেয়ে লরেনকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। বাড়িতে একা পড়ে আছে পোষা কুকুরটি।
এদিকে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে অস্ত্র কেনার জন্য ‘এ’ ক্যাটেগরির লাইসেন্স পেয়েছিল ট্যারেন্ট। গত শুক্রবারের হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলগুলো তার পরেই কিনেন তিনি।
হামলার মিনিট দশেক আগে ট্যারান্ট ৭৩ পাতার একটি ইশতেহার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেনের দফতরসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অফিসে পাঠায়। জেসিন্ডার দফতরের তরফে স্বীকারও করা হয়েছে তা। ইশতেহারে বলা হয়েছে, প্রাক্তন এই শরীরচর্চার প্রশিক্ষক বুলগেরিয়া, উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি তুরস্ক ও পাকিস্তানের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে একাধিকবার গিয়েছিল। বিশেষত তুরস্কের প্রসঙ্গ তার লেখার বার বার এসেছে। ভারতের নাম উল্লেখ করেও সে লিখেছে, ‘ইউরোপের মাটি থেকে এই দখলদারদের সরাতে হবে।’
এদিকে আজ রোববার নিউজিল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী একাই এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটান। ব্রেনটন টেরেন্ট নামে ওই বন্দুকধারীর গুলিতে ৫০ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এসব তথ্য জানিয়েছে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ।
দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ রোববার জানান, মসজিদে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত যুবক টেরেন্ট একাই হামলা চালিয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করা হলেও তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হবে। তিনি এও বলেন, এ নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাইছে না পুলিশ।
হামলাকারী সন্দেহে গ্রেফতার যুবক টেরেন্টকে শনিবার আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে জানিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানিয়েছেন, মসজিদে বন্দুক হামলার জন্য কেবল ২৮ বছর বয়সী টেরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা সাহসের সঙ্গে তাকে গুলি ছোড়া থেকে নিবৃত্ত করে আটক করেছে।
কমিশনার বুশ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আটক অপর দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের মধ্যে এক নারীকে কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর অপর এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৮ বছর বয়সী একজনকে আটক করা হয়। সোমবার তাকে আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
টেরেন্টকে ৫ এপ্রিল ফের আদালতে তোলা হবে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার জানান, এ ঘটনায় সত্যিকার অর্থে কতজন জড়িত ছিল তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছি না’। ব্রেনটন টেরেন্টকে আগামী ৫ এপ্রিল আবারও আদালতে তোলা হবে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ৫০ জন মারা যান। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৮ জন। এই সন্ত্রাসী হামলার সময় আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তারা মসজিদে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে এক পথচারীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ফিরে আসেন। ফলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ক্রিকেটাররা। এ ঘটনায় বাংলাদেশের চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অস্ট্রেলীয় নাগরিক ২৮ বছর বয়সী ব্রেনটন টেরেন্ট নামে স্বঘোষিত এক শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী হামলার দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করে। ওই ভিডিওতে তাকে নিজের বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ঘটনার পরই তাকেসহ চারজনকে আটকের কথা জানায় দেশটির পুলিশ।