
বাংকারের ভেতর পরিবার নিয়ে বসে আছেন চৌধুরী হাকিম। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দা চৌধুরী হাকিম দ্বীনের একটি বাংকার আছে। খুবই ঠাণ্ডা, মাটির নিচে সেঁতসেঁতে একটি গর্ত। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে তিনি এবং তার পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
যুদ্ধাবস্থার মধ্যে তারা রাতে এই বাংকারে থাকেন। হাকিম বলেন, তার কাছে মনে হয়, তিনি কবরের মধ্যে বাস করছেন।-খবর এএফপির
কারগিল যুদ্ধের পর থেকে তিনি এই বাংকারটি ব্যবহার করে আসছেন। ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারত কারগিল যুদ্ধ হয়েছিল।
২০ বছর পর পরমাণু শক্তিধর দেশদুটি ফের মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রীত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় একটি আত্মঘাতী হামলায় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ জওয়ান নিহত হওয়ার পর সাম্প্রতিক এই সংকটের শুরু হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে ভারত-পাকিস্তান পরস্পরের দিকে নিয়মিতভাবেই কামান ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করছে। সম্প্রতি দুই প্রতিবেশী পরমাণু যুদ্ধের কিনার থেকে পিছু হটেছে।
তবে এসময়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক ভারী গোলা বিনিময় ঘটেছে। তখন হাকিম দ্বীনের পরিবারসহ দুর্বিষহ বাংকারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ধান্না গ্রাম তার বাড়ি। ঘর থেকে একটি ঢিল ছুড়লে যতদূর যায়, চার ফুট লম্বা এবং পাঁচ ফুট চওড়া বাংকারটি দূরত্ব ঠিক ততটুকুই।
কাজেই পরিবার নিয়ে মাটির নিচের এই ছোট্ট আশ্রয়ে অবস্থান করা কখনোই স্বস্তিদায়ক হতে পারে না।
অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্করা কখনোই বাংকারের ছাদের নিচে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। কাজেই কার্ডবোর্ড কিংবা কার্পেটের ওপর সারাক্ষণ বসে থাকতে হয় তাদের।
মাটির চুলা দিয়ে যখন ধোঁয়া বের হয়, তখন সবাই ত্রাহী দশায় পড়ে যায়। হাকিম বলেন, যখন গোলাবর্ষণ শুরু হয়, তখন শিশুদের নিয়ে আমরা বাংকারে চলে যাই।
তিনি বলেন, বাংকারের মধ্যে হাঁটতে তাদের পায়ে জোর থাকে না। ভয়ে সেখানে তারা কিছু খেতেও পারেন না।
হাকিমের বড় ভাই চৌধুরী মকবুল এমন একটি বাংকারে থাকেন, যেটা গোরস্তানের চেয়েও খারাপ। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে আমরা কোনো কবরের মধ্যে অবস্থান করছি।
ভারতীয় গোলায় হাকিমের বাড়িতে এক একটি গর্তের আকার হাতের মুঠোর সমান। একটি গোলা এসে তার রান্নাঘরে আঘাত হানে এবং অন্যটি গিয়ে তাদের বাহিরের দরজা ভেঙে ফেলে।
বাংকারের সামনে তিনি বালুর বস্তা স্তূপ করে রেখেছেন। কিন্তু যখন গোলা এসে আঘাত হানতে শুরু করে, তখন মাটির দেয়াল ও প্লাস্টিকের পাতের ছাদ-তাদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট না।
নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশে সাম্প্রতিক গোলা বিনিময়ে বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ধান্না গ্রামে গোলাবর্ষণ এতটাই তীব্র ছিল যে সেখান থেকে দুই হাজার লোক পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কেবল নিজেদের সম্পদ রক্ষায় হাতে গোনা কয়েকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থেকে গিয়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন, এক ডজন বসতবাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সেবা প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় গোলার আঘাত লেগেছে। হাকিম দ্বীনের পরিবারের সদস্যদের পার্শ্ববর্তী কোটলি শহরে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
উত্তেজনা বর্তমানে কম হলেও ২০১৬ সাল থেকে সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের গোলাবিনিময় নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
স্থানীয় সাংবাদিক সর্দার জাভেদ বলেন, এটা হচ্ছে ভয়ের উপত্যকা। এখানের জীবন অচল হয়ে আছে। লোকজন শব্দ শুনলেই অস্থির হয়ে পড়েন। পর মুহূর্তে তাদের ওপর কী ঘটতে যাচ্ছে, তা তারা জানেন না।