এএফপির বিশ্লেষণ
পাক-ভারত উত্তেজনায় ম্লান যুবরাজের দিল্লি সফর

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১৩ পিএম

ছবি: এএফপি
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মঙ্গলবার ভারত সফরে আসেন। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় তার এ সফর যেমন ম্লান হয়ে পড়েছে, তেমনি ব্যবসায়িক মিশনও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
তেল বিক্রি বাড়াতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির দেশগুলোর পেছনে ছুটছেন সৌদি যুবরাজ। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে স্বাগত জানান। তার ঐতিহ্যবাহী আলিঙ্গনে যুবরাজকে বুকে টেনে নেন।
এর আগে দুদিনের পাকিস্তান সফরে ছিলেন সৌদি যুবরাজ। সেখান থেকেই ভারত সফরে আসেন তিনি।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের আত্মঘাতী হামলায় ভারতের একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ জওয়ান নিহত হন। এ হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপাচ্ছে চিরবৈরী ভারত। ইসলামাবাদ সেই দায় অস্বীকার করেছে। যদিও পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উত্তাল হয়ে পড়ে ভারত। পরমাণুসমৃদ্ধ দুই প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক মহড়ায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। বুধবার মোদির সঙ্গে যুবরাজের বৈঠকে বিষয়টি উঠে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সোমবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের বলেন, দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। এ মতানৈক্যের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা যায় কিনা, আমরা তা-ই দেখছি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন আমরা এটি করতে যাব। পাকিস্তান জড়িত আছে বলে যদি কোনো কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য থাকে, তা হলে তা আমাদের দিন। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি- ব্যবস্থা নেব।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে হামলার শিকার হলেও জবাব দেয়ার হুমকি দেন তিনি। তবে ইমরান খানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জঙ্গিদের লাগাম টেনে ধরতে বিশ্বাসযোগ্য ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ চেয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবারের হামলার আগে সৌদি যুবরাজের সফরের মূল আলোচ্যসূচি ছিল তেলসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে ভারতের অপরিশোধিত তেলের ২০ শতাংশ আসে সৌদি আরব থেকে। এ ছাড়া তেলের উৎস হিসেবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে কোণঠাসা করতে চেয়েছিলেন যুবরাজ।
ভারতের তেল সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে গত বছর সৌদির চেয়ে একস্তরে এগিয়ে ছিল ইরান। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটির তেল ব্যবসা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের মূল অবকাঠামো বিনিয়োগে সৌদি বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে আসছেন মোদি।
নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহকারী ফেলো কবির তানেজা বলেন, আমি মনে করি, এ হামলার প্রেক্ষাপটের মধ্যেও আলোচনার মূলকেন্দ্রবিন্দু থাকবে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ঘিরেই। কারণ এটি দুই দেশের জন্যই লাভজনক।
তিনি বলেন, ভারত ও সৌদি আরব জানে- তারা পরস্পরের কাছ থেকে কী চাচ্ছে। ভারত তেলের দামের ক্ষেত্রে সুবিধা চাইবে এবং সৌদি আরব ভারতীয় বাজারে ঢুকতে চাইবে। কারণ তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সৌদি আরব নিজের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চাচ্ছে।
তানিজা বলেন, পাকিস্তানের প্রতি সৌদি আরবের নিঃশর্ত সমর্থনে ধাক্কা দিতে ভারত এই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চাইবে।
সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক চাপে থাকা সৌদি যুবরাজ ভারত-পাকিস্তান ও চীন সফরে বেরিয়েছেন।
বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহর নিয়ে দুই নেতা রওনা হওয়ার আগে পাঞ্জাবি বাদ্যে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে সৌদি যুবরাজকে।
বুধবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এর আগে দুই পক্ষ থেকে বিবৃতি ও চুক্তির কথা ঘোষণা করা হবে। এর পর দুদিনের চীন সফরে বের হবেন সৌদি যুবরাজ।