বিবিসির বিশ্লেষণ: ট্রাম্প-কিমের ভেন্যু কেন ভিয়েতনাম
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:২১ এএম
ট্রাম্প-কিমের দ্বিতীয় বৈঠক। ফাইল ছবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের পরবর্তী বৈঠক হবে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে।
শুক্রবার জোড়া টুইটে ট্রাম্প নিজেই বৈঠকের স্থান ও সময় নিশ্চিত করেছেন। আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এ বৈঠক।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এটি দ্বিতীয় বৈঠক।
দুই নেতাই মনে করছেন, ভিয়েতনাম নিরপেক্ষ ভেন্যু; কিন্তু কেন?
একটা সময় ভিয়েতনামে বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও সে যুদ্ধ শেষ হয়েছে ৪৪ বছর আগেই। ১৯৬৫ সালের মার্চে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিতে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দানাং শহরে নেমেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা।
সেই একই শহরে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ভিয়েতনামের সাবেক শত্রু যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধের সময়কার মিত্র উত্তর কোরিয়া। এ বৈঠকের ভেন্যু হচ্ছে হ্যানয়।
ভেন্যু নিশ্চিত করতে গত তিন দিন পিয়ংইয়ং সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিফেন বিগেন।
শুক্রবার এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, খুবই ফলপ্রসূ বৈঠক এবং কিম জং উনের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের সময় ও তারিখ নিয়ে সমঝোতা শেষে আমার প্রতিনিধিরা মাত্রই উত্তর কোরিয়া ছেড়েছেন।
আমাদের বৈঠকটি ভিয়েতনামের হ্যানয়ে হতে যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারির ২৭ ও ২৮ তারিখ।
কমিউনিস্টরা শাসন করলেও ভিয়েতনাম কার্যত পুঁজিবাদী অর্থনীতি। ১৯৮৬ সালে নেয়া দৈ মৈ নামে পরিচিত অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ভিয়েতনামকে তৈরি করেছে এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে। আর দেশটি এখন একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মিত্র দেশ।
দুপক্ষের চাহিদা পূরণে নিরপেক্ষ হিসেবেই দেশটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির ভিয়েতনাম বিশেষজ্ঞ কার্ল থ্যায়ার।
তিনি বলেন, প্রথম বিষয় হলো শীর্ষ বৈঠকের সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার সক্ষমতা আছে দেশটির। তা ছাড়া দুপক্ষই মনে করছে দেশটি নিরপেক্ষ।
বিশ্নেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরীয় নেতার জন্য চীনের ওপর দিয়ে ভিয়েতনামে যাওয়া নিরাপদ বেশি। আর খুব অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম একটি, যার সঙ্গে উভয়পক্ষেরই একটি সুসম্পর্ক বিরাজ করছে।
এর মাধ্যমে উত্তর কোরীয় নেতা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, তার দেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এ ছাড়া কিম ভিয়েতনাম ডেভেলপমেন্ট মডেল নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং এবার নিজে থেকেই দেশটির রূপান্তর দেখার সুযোগ পাবেন।
অধ্যাপক থ্যায়ার বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধের পর ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা, মুক্তবাণিজ্য আলোচনা- এসব বিষয়ই এখন উত্তর কোরীয় নেতার জন্য আগ্রহের বিষয়। তা ছাড়া তার মনে হয়েছে, ভিয়েতনামের নিরাপত্তাব্যবস্থাও খুব ভালো।
যদি ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক সাফল্য কিমকে উৎসাহিত করে, তা হলে সেই একই বিষয় হয়তো উদ্বুদ্ধ করেছে ট্রাম্পকেও।
অ্যাপেক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ট্রাম্প ২০১৭ সালে ভিয়েতনাম সফর করেছেন এবং ভিয়েতনামকে একটি কমফোর্ট জোনই মনে হয়েছে তার।
এ ছাড়া ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধে সমর্থন দিয়ে যে সহযোগিতা ভিয়েতনাম করেছে তাও স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ছাড়া ট্রাম্পও ভিয়েতনামের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সন্তুষ্ট, বিশেষ করে অতিউৎসাহী সাংবাদিকদের ঝামেলামুক্ত।
ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের এক মুখপাত্র বলেন, ভিয়েতনাম একসময় যুদ্ধ করলেও এখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু।
আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার নতুন ইতিহাস রচনার জন্য ভিয়েতনাম হবে চমৎকার একটি স্থান।
এর আগে গত বছরের ১২ জুনে সিঙ্গাপুরে প্রথম বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প ও কিম। উদ্দেশ্য- কোরিয়া উপদ্বীপকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করা।
প্রথম বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে কিম প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো রূপরেখা দেননি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও অবরোধ প্রত্যাহারসহ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি পাননি কিম।