বর্তমান শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। একটি জাতি শিশুদের কতটা গুরুত্ব দেয়, তার ওপর নির্ভর করে ওই জাতির উন্নতি। কিছু কিছু দেশ আছে যেসব দেশে শিশুরা সবচেয়ে নিরাপদ। সেসব দেশগুলোতে শিশুরা অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারে। এমনকি তাদের অধিকার শতভাগ বাস্তবায়িত করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও বসবাসযোগ্য দেশগুলোর র্যাঙ্কিং আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। এ র্যাঙ্কিং দেশগুলোর গড় আয় বা আর্থিক স্থিতিশীলতা ভিত্তিতে করা হয়নি, বরং গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিশুদের স্বাস্থ্য, মানসিক প্রশান্তি, শিক্ষার গুণগত মান, পারিবারিক ছুটির নীতির ওপর। এমনকি কোন দেশগুলোয় সবুজের সমারোহ এবং শিশুদের জন্য যথেষ্ট খেলার মাঠ রয়েছে, সেই প্রশ্নও আপনার থাকতেই পারে। ইউনিসেফ এই বিষয়গুলো দেখে শিশুর সুস্থতার একটি ‘রিপোর্ট কার্ড’ তৈরি করে। খবর বিবিসির।
জাপান: জাপানে শৈশবে স্থূলতার হার সবচেয়ে কম। এর পাশাপাশি, শিশুমৃত্যুর হার কম, বায়ু ও পানি দূষণের মাত্রাও (যা শিশুদের প্রভাবিত করে) কম। এটি যেকোনো পরিবারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। এখানে ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা যেমন কম ঘটে, তেমনি যেকোনো দেশের তুলনায় জাপানে খুনের হার সবচেয়ে কম, প্রতি লাখে মাত্র দশমিক দুই জন মানুষ। শিশুরা রাজধানী টোকিওর চারপাশে হাঁটতে পারে এবং নিজে নিজে স্কুলে যেতে পারে। এটি ওই দেশে স্বাভাবিক কারণ সেখানকার পরিবেশ খুবই নিরাপদ। বাচ্চাদের নিয়ে কেউ তেমন দুশ্চিন্তা করে না, কারণ এর প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ছাড়াও, জাপানে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। ইউনিসেফের উন্নয়ন সহযোগী ওইসিডি’র তথ্য অনুসারে, এর শিক্ষা ব্যবস্থা ৭৬টি দেশ এবং অঞ্চলগুলির মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে।
এস্তোনিয়া: এখানকার শিশুরা কম বায়ু ও শব্দ দূষণ এবং কীটনাশকের সংস্পর্শে আসে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, গ্রেট ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এস্তোনিয়ায় বেশি সবুজ স্থান রয়েছে। শিশুরাও বাড়ির কাছাকাছি খেলার মাঠ এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক সুবিধা উপভোগ করতে পারে। এস্তোনিয়ায় কম ওজন নিয়ে শিশু জন্ম নেওয়ার হার বিশ্বের দ্বিতীয়-সর্বনিম্ন এবং প্রসূতি মায়ের প্রসবপূর্ব যত্নের গুণমানেও দেশটি বেশ এগিয়ে। এখানকার শিশুদের গণিত, বিজ্ঞান এবং ভাষাগত দক্ষতা এশিয়ার বাইরের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। এখানে ডিজিটাল দক্ষতার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
স্পেন: বিশেষ করে কম শিশুমৃত্যুর হার এবং কম বায়ু ও পানি দূষণের কারণে শিশুদের অসুস্থতার হার অনেক কম হওয়ায় চারপাশের পরিবেশের জন্য স্পেনকে ইউনিসেফের র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ রেট দেওয়া হয়েছে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে দেশটি তৃতীয় এবং মৌলিক সাক্ষরতা ও সামাজিক দক্ষতায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
ফিনল্যান্ড: ইউনিসেফের র্যাঙ্কিংয়ে ফিনল্যান্ডের অবস্থান পঞ্চম। দেশটি তিনটি বিভাগের মধ্যে দুটিতে বেশ ভালো স্কোর করেছে। শিশু সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবেশের জন্য প্রথম স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড (যেমন- বায়ুর গুণমান)। শিশুদের চারপাশের পরিবেশের ক্ষেত্রে (যেমন - স্কুল, ট্রাফিক পরিস্থিতি এবং সবুজ স্থান) দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শিশুদের একাডেমিক এবং গণিতের দক্ষতার ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। যেখানে বাবা মায়েরা সন্তানের স্কুলের কাজ নিয়ে অনেক খোঁজখবর রাখেন।
নেদারল্যান্ডস: শিশুদের সুস্থতার জন্য ইউনিসেফের সামগ্রিক তালিকার শীর্ষে রয়েছে নেদারল্যান্ডস। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রথম এবং তাদের দক্ষতা বিকাশে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে, বাচ্চাদের সবার থেকে আলাদা বা ভিন্ন কিছু হতে শেখানো হয়। কিন্তু নেদারল্যান্ডস পুরো উলটো। এখানে একটা কথাই আছে, ‘শুধু নরমাল থাকো, পাগলের অভাব নেই’।